পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন আজকের এই পোস্ট থেকে | একটা দেশে ভ্রমণ করার জন্য পাসপোর্ট অবশ্যই দরকার হয়। পাসপোর্ট ছাড়া আপনি একটা দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণ করতে পারবেন না।
আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন না অনলাইনের মাধ্যমে ই পাসপোর্ট রিনিউ করার আবেদন করা যায়। আপনারা চাইলে আপনার ঘরে বসে আপনার স্মার্টফোন অথবা কম্পিউটারের সাহায্যে ই পাসপোর্ট নবায়ন আবেদন করতে পারবেন।
এছাড়া পাসপোর্ট এর একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। ওই মেয়াদ পর্যন্ত একজন ব্যক্তি পাসপোর্ট দিয়ে এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণ করতে পারবে। পাসপোর্ট এর মেয়াদ শেষ হলে সেই পাসপোর্ট আবার রিনিউ করতে হয়।
পাসপোর্ট নবায়ন না করলে আপনি ওই পাসপোর্ট পরবর্তীতে আর ব্যবহার করতে পারবেন না। আগে বাংলাদেশ পাসপোর্ট এর মেয়াদ থাকতো পাঁচ বছর। কিন্তু বর্তমানে ই-পাসপোর্ট এর কারনে বাংলাদেশে প্রতিটি পাসপোর্ট এর মেয়াদ হচ্ছে ১০ বছর। দশ বছর পর পরবর্তীতে আবার পাসপোর্ট রিনিউ করতে হবে। পরবর্তীতে রিনিউ করার পরে আপনি আবার ওই পাসপোর্ট এর মেয়াদ ১০ বছর বা পাঁচ বছর বেশি করতে পারবেন। এভাবেই পাসপোর্ট রিনিউ করে যেতে হবে।
আজকের পোষ্টের মাধ্যমে আমরা জানবো কিভাবে এমআরপি থেকে ই-পাসপোর্ট নবায়ন করতে হয়।
পাসপোর্ট রিনিউ করার নিয়ম
১. পাসপোর্ট রিনিউ করার জন্য প্রথমে আপনাকে রিনিউ করার আবেদন করতে হবে।
২. তারপরে অনলাইনে অথবা সরাসরি গিয়ে Passport Renew করার ফি পরিশোধ করতে হবে।
৩. তারপর আপনার নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে পাসপোর্ট রিনিউ করার আবেদন ফরম এবং অন্যান্য কাগজপত্র জমা দিতে হবে।
৪. এরপর পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে আপনার বায়োমেট্রিক তথ্য প্রদান করতে হবে এবং পাসপোর্ট গ্রহণের একটি স্লিপ সংরক্ষণ করতে হবে।
এরপর নির্ধারিত তারিখে আপনাকে পাসপোর্ট দিয়ে দেওয়া হবে। পাসপোর্ট রিনিউ এর সাধারণত ২১ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেক তাড়াতাড়ি পাসপোর্ট চলে আসে, আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে পাসপোর্ট আসতে এর থেকেও দেরি হতে পারে। আপনার পাসপোর্টে যদি কোন ধরনের তথ্য সংশোধন জনিত কোন ঝামেলা না থাকে তাহলে আপনার পাসপোর্ট তাড়াতাড়ি রিনিউ হয়ে যাবে।
অনলাইনে ই-পাসপোর্ট রিনিউ করার পদ্ধতি| Passport Renewal
ই-পাসপোর্ট রিনিউ করার জন্য প্রথমে এই https://www.epassport.gov.bd/landing ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে| ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পরে এখানে যাবতীয় ইনফর্মেশন দিয়ে “সাবমিত” বাটনে ক্লিক করলে আপনার এমআরপি থেকে ই-পাসপোর্ট হয়ে যাবে|
স্পস্তভাবে বুঝার জন্য নিচের পদ্দতিগুলো অনুসরন করুন|
১. ই-পাসপোর্ট রিনিউ করার আবেদন করার জন্য প্রথমে অবশ্যই ই পাসপোর্ট এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (https://www.epassport.gov.bd/landing) প্রবেশ করুন।
২. তারপর Apply online for e-passport/Re-Issue অপশনটিতে ক্লিক করতে হবে। তারপর আপনি কোন দেশ থেকে এবং কোন জেলা থেকে ই পাসপোর্ট রিনিউ করতেছেন সেটা উল্লেখ করতে হবে। সেটা উল্লেখ করার পরে আপনার ব্যক্তিগত তথ্যগুলো দিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করুন।
৩. অ্যাকাউন্ট তৈরি করার পরে আপনি যে ইমেইল দিয়ে একাউন্ট তৈরি করেছেন সেই ইমেইল এর একটি ভেরিফিকেশন লিংক যাবে, সেটা ভেরিফিকেশন করে নিন। এরপর লগইন করার পরে এপ্লাই ফর এ নিউ পাসপোর্ট অপশনটিতে ক্লিক করুন।
৪. এরপর আপনার পাসপোর্ট কোন ধরনের সেটা সিলেক্ট করে পরবর্তী অপশনে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য জেলা, উপজেলা ইত্যাদি প্রদান করতে হবে। এরপর আপনাকে আপনার পাসপোর্ট এর ধরন নির্বাচন করতে হবে।
আপনার কাছে যদি আগের পুরোনো পাসপোর্ট থাকে সেক্ষেত্রে আপনি দ্বিতীয় অপশনটি নির্বাচন করবেন এবং আপনার কাছে যদি নতুন ই পাসপোর্ট থাকে তাহলে আপনি প্রথম অপশনটি নির্বাচন করবেন। এই সেকশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৫. পরবর্তী সেকশনে আপনি কি জন্য পাসপোর্ট রিনিউ করছেন সেটা নির্বাচন করতে হবে। সেখানে অবশ্যই এক্সপায়ার্ড বা মেয়াদ শেষ অপশনটি সিলেক্ট করবেন। আর যদি মেয়াদ থাকা অবস্থায় আপনি পাসপোর্ট রিনিউ করতে চান তাহলে কনভার্শন টু ই-পাসপোর্ট অপশনটি সিলেক্ট করুন।
৬. এই অংশে আপনার পূর্ববর্তী পাসপোর্ট এর নাম্বার, জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার, পাসপোর্ট কত তারিখে ইসু হয়েছিল এবং পাসপোর্ট এর মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ উল্লেখ করতে হবে।
এরপর আপনার ব্যক্তিগত তথ্য এবং আপনার পারিবারিক তথ্য আপনার ডকুমেন্ট অনুসারে প্রদান করুন।
৭. এরপর পরবর্তী পাসপোর্ট অপশনটিতে আপনার পাসপোর্টটি কত পৃষ্ঠার এবং কত বছরের জন্য নবায়ন করতে চান সেটা নির্বাচন করতে হবে। আপনার পাসপোর্ট অনুসারে এটি নির্বাচন করুন।
img5
৮. পরবর্তী অংশে আপনার ডেলিভারি ধরন নির্বাচন করতে হবে। আপনি যদি রেগুলার ডেলিভারি নির্বাচন করেন তাহলে আপনার পাসপোর্ট পেতে একটু বেশি সময় লাগতে পারে। তবে আপনি যদি এক্সপ্রেস ডেলিভারি নির্বাচন করেন তাহলে আপনি আপনার পাসপোর্ট তাড়াতাড়ি পেয়ে যাবেন।
এরপর সাবমিট অপশনে ক্লিক করলে আপনাকে একটি পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করতে বলবে। সেই পিডিএফ ফাইলটি ডাউনলোড করে নিজের কাছে অবশ্যই সংরক্ষণ করে রাখবেন। অথবা আপনার কাছে যদি প্রিন্টার থাকে তাহলে প্রিন্ট করে রাখবেন।
ই পাসপোর্ট রিনিউ করার ফি কত
উপরে আমাদের ই পাসপোর্ট অনলাইনে রিনিউ এর আবেদন করার কাজ শেষ হয়েছে। এবার আপনাকে ই পাসপোর্ট রিনিউ করার আবেদন ফি পরিশোধ করতে হবে।পাসপোর্ট নবায়ন করতে কত টাকা লাগে জানতে এই পোস্টটি পরুন|
এছাড়া Passport renewal করতে ৫ বছর মেয়াদী ৪৮ পাতার পাসপোর্ট এর ক্ষেত্রে আবেদন ফি ৪,০২৫ টাকা এবং ৬৪ পাতার পাসপোর্ট এর ক্ষেত্রে আবেদন ফি ৬,৩২৫ টাকা দিতে হবে। অন্যদিকে ১০ বছর মেয়াদী ৪৮ পাতার পাসপোর্ট এর ক্ষেত্রে আবেদন ফি ৫,৭৫০ টাকা এবং ৬৪ পাতার পাসপোর্ট এর ক্ষেত্রে আবেদন ফি ৮,০৫০ টাকা।
আপনি চাইলে অনলাইনের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং অথবা ইন্টারনেট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাসপোর্ট নবায়ন করার আবেদন ফি জমা দিতে পারবেন। তবে যদি অনলাইনে আবেদন ফি পরিশোধ করা না যায়, সে ক্ষেত্রে আপনি চাইলে ব্যাংকের মাধ্যমে আবেদন ফি জমা দিয়ে সেটার একটি স্লিপ নিজের কাছে সংরক্ষণ করে রাখবেন। পরবর্তীতে আবেদন ফি পরিশোধের স্লিপ চাইতে পারে।
পাসপোর্ট রিনিউ বা নবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
- জাতীয় পরিচয় পত্র বা অনলাইন জন্ম নিবন্ধন এর ফটোকপি।
- অনলাইনে আবেদন ফি জমা দিয়ে থাকলে সেটার একটি প্রমাণ পত্র অথবা ব্যাংকে চালানোর মাধ্যমে যদি আবেদন ফি জমা দেন তাহলে চালানের একটি রশিদ।
- ইউটিলিটি বিলের কপি।
- পূর্ববর্তী পাসপোর্ট ও ডাটা পেজের প্রিন্ট কপি।
- বৃত্তির বয়স ১৮ বছর কম হলে পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয় পত্র।
- ব্যক্তির বয়স ১৫ বছরের কম হলে পিতা মাতার পাসপোর্ট সাইজ ছবি অথবা ব্যক্তির অভিভাবকের পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
এই কাগজপত্র এবং ডকুমেন্টগুলো নিয়ে আপনাকে আপনার নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে জমা দিয়ে আসতে হবে। তারপর কিছুদিনের মধ্যে আপনি আপনার পাসপোর্ট হাতে পেয়ে যাবেন।
জন্ম নিবন্ধন দিয়ে পাসপোর্ট নবায়ন করা যাবে কি
আপনার বয়স যদি ১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে হয় তাহলে আপনি অনলাইন জন্ম নিবন্ধন দিয়ে পাসপোর্ট নবায়ন করতে পারবেন। তবে আপনার বয়স যদি ২০ বছর বা তার ঊর্ধ্বে হয় তাহলে পাসপোর্ট নবায়ন করার জন্য আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র লাগবে।
তবে সরকারিভাবে বিশেষ ক্ষেত্রে আপনি চাইলে জন্ম নিবন্ধন দিয়ে ২০ বছরের ঊর্ধ্বে বয়স ব্যক্তিরাও পাসপোর্ট রিনিউ করতে পারবে। মনে রাখবেন এটা শুধুমাত্র বিশেষ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
পাসপোর্ট রিনিউ করতে কতদিন লাগে
পাসপোর্ট নবায়ন করতে কতদিন লাগবে সেটা বলাটা মুশকিল। তবে আপনার পাসপোর্ট এর মধ্যে যদি সংশোধন জনিত কোন ধরনের ঝামেলা না থাকে তাহলে আপনি আপনার পাসপোর্ট ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে হাতে পাবেন।
এছাড়া যদি আপনার পাসপোর্টে সংশোধন বা অন্য কোন ঝামেলা থাকে তাহলে আপনার পাসপোর্ট আসতে এক মাস থেকে ছয় মাস পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। সেটা সম্পূর্ণ পাসপোর্ট অফিসের দায়িত্বগত কর্মকর্তাদের তদন্তের উপর নির্ভর করবে।
বন্ধুরা পাসপোর্ট নিয়ে যদি আপনাদের কোন ধরনের প্রশ্ন থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন, আল্লাহ হাফেজ।