কম্পিউটার ফাস্ট করার উপায় আমরা যখন নতুন কম্পিউটার কিনি, তখন আমরা সেই কম্পিউটারটা খুব দ্রুত ব্যবহার করতে পারি। কিন্তু কম্পিউটারে যখন দিন দিন পুরনো হতে থাকে তখন কম্পিউটার ধীরে ধীরে স্লো হয়ে যায়।
কম্পিউটার স্লো হওয়া স্বাভাবিক, কারণ যেকোন ইলেকট্রনিক জিনিস যখন আপনি ব্যবহার করবেন তখন সেটা পুরনো হবে। আর পুরনো জিনিস দিন দিন খারাপ হতে থাকে।তাহলে চলুন আজকের পোস্ট এর মাধ্যমে আমরা জানবো কিভাবে কম্পিউটার ফাস্ট করা যায়
আরো পড়ুন
অফিসিয়াল ফোন চেনার উপায় |
কম্পিউটার স্লো হওয়ার দুটি কারণ হতে পারে
কম্পিউটার স্লো হওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে যাকে আমরা মূলত দুই ভাগে ভাগ করতে পারি| যেমন
- হার্ডওয়ার জনিত সমস্যা
- সফটওয়্যার জনিত সমস্যা
হার্ডওয়ার জনিত সমস্যা কি
হার্ডওয়ার জনিত সমস্যা হতে পারে নিম্নমানের পাওয়ার সাপ্লাই পাওয়ার কেবল প্রসেসর কুলার ত্রুটিপূর্ণ হার্ডডিস্ক মাদারবোর্ড ইত্যাদি সমস্যা| অথবা প্রসেসর যদি হয় তখনও কম্পিউটার হতে পারে|
সফটওয়্যার জনিত সমস্যা কি
সফটওয়্যার জনিত সমস্যা হলো রামের স্বল্পতাজনিত কারণে উইন্ডোসের অনুপযুক্ত ভার্শন প্রচুর ম্যালওয়্যার, মাদারবোর্ডের ড্রাইভার ঠিকমতো সেটআপ না হওয়া ইত্যাদি |
উপরে আলোচিত এসব সমস্যা এক বা একাধিক থাকলে যতই চেষ্টা করে কোন লাভ নেই| তাই আমাদের কম্পিউটার ফাস্ট করতে হলে অবশ্যই উপরের সমস্যা সমাধান করে নিতে হবে| কিভাবে সমস্যার সমাধান করতে হবে তা নিয়ে আমরা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করব|
কম্পিউটার ফাস্ট করার উপায়
কিভাবে কম্পিউটার ফাস্ট করা যায় আজকে আমরা বিস্তারিত জানব| তার জন্য অবশ্যই পুরো আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়তে হবে| নিচের কম্পিউটার ফাস্ট করার উপায় বিস্তারিত আলোচনা করা হ্যালো|
C- Drive সি-ড্রাইভ ক্লিনআপ
কম্পিউটার স্লো হওয়ার অন্যতম কারণ হলো আপনার কম্পিউটারের সি-ড্রাইভ পূর্ণ করে ফেলা। তাই সব সময় চেষ্টা করবেন সি-ড্রাইভ খালি রাখার জন্য। আপনি যে অ্যাপস গুলো ব্যবহার করবেন, সে অ্যাপস গুলোর মূল ফাইলগুলো আপনি অন্য কোন ড্রাইভ এ রাখবেন, এতে করে সি-ড্রাইভ অনেকটা খালি থাকবে।
HDD পরিবর্তে SDD-র ব্যবহার
আপনার কম্পিউটারে যদি HDD থাকে, তাহলে তার পরিবর্তে আপনি SSD ব্যবহার করতে পারেন। কারণ এইচডিডি তুলনায় এসএসডি অনেক গুণ ফাস্ট। যার কারনে আপনার কম্পিউটারের স্পিড অনেক বেশি বৃদ্ধি পাবে। অবশ্যই ভালো কোম্পানির এসএসডি ব্যবহার করবেন এতে করে আপনার কম্পিউটারের পারফরম্যান্স আরো বেশি বৃদ্ধি পাবে। এবং আপনার এসএসডির আয়ুকাল ও বৃদ্ধি পাবে।
Hard Disk হার্ড ডিস্ক ক্লিন
আপনার কম্পিউটারের মধ্যে যতগুলো ডিস্ক আছে বা হার্ডডিক্স আছে, সব গুলো সব সময় ক্লিন রাখবেন। আপনার হার্ডডিক্সে অপ্রয়োজনীয় কোন ফাইল রাখবেন না, যেগুলো আপনার হার্ডডিক্সের অযথা জায়গা নষ্ট করবে। হার্ডডিস্ক সবসময় ম্যানুয়াল ভাবে ক্লিন করার চেষ্টা করবেন। হার্ড ডিস্ক ক্লিন করার জন্য আলাদা কোন অ্যাপস ব্যবহার করতে যাবেন না, এতে করে আপনার হার্ডডিস্ক ক্লিন হওয়ার বদলে উল্টো হার্ডডিস্ক ভরে যাবে।
টেম্পোরারি বা জাঙ্ক ফাইল ডিলিট
আপনার হার্ডডিস্কের টেম্পোরারি ফাইল এবং জাঙ্ক ফাইল গুলো সব সময় ডিলিট। আপনি যখন কোন অ্যাপস ব্যবহার করেন, তখন সেই অ্যাপস এর কিছু ডাটা বা ইমেজ হার্ডডিক্সে টেম্পোরারি ফাইল বা জাঙ্ক ফাইল হিসেবে জমা হয়। আপনি যদি সেগুলোর ডিলেট না করেন, তাহলে সেগুলো জমতে জমতে আপনার হার্ডডিক্সের মেমোরি ভরে যাবে। এতে করে আপনার কম্পিউটার স্লো হয়ে যাবে।
Recycle Folder রিসাইকেল ফোল্ডার ক্লিন
আপনার কম্পিউটারের রিসাইকেল ফোল্ডার সবসময় পরিষ্কার রাখুন। আপনি যখন কম্পিউটারের কোন কিছু ডিলিট করেন, তখন সেই ডিলিট ফাইল গুলো আপনার কম্পিউটারের রিসাইকেল ফোল্ডারে গিয়ে জমা হয়। তাই সব সময় কোন কিছু ডিলিট করার পরে, রিসাইকেল ফোল্ডারে গিয়ে সেটা আবার ডিলিট করুন। অথবা আপনি অটো ডিলিট অপশন চালু করে দিতে পারেন। এতে করে আপনি যে সময় নির্ধারণ করে দিবেন, ঐ সময় হলে আপনার কম্পিউটারে ফাইলটিকে অটোমেটিক ডিলিট করে দিবে।
স্টার্টআপ প্রোগ্রাম আনইনস্টল
আপনার কম্পিউটারের যেসব অপ্রয়োজনীয় অ্যাপস বা ফাইলগুলো আপনার কম্পিউটার চালু হওয়ার সাথে সাথে চালু হয়, সেগুলো ডিলিট করে। যখন আপনি কম্পিউটার চালু করেন তখন কিছু অ্যাপস আপনার কম্পিউটার এর ব্যাকগ্রাউন্ডে অটোমেটিক চালু হয়, যেগুলো আপনার কখনো কাজে আসে না। এই অ্যাপস গুলো আপনার কম্পিউটারের Ram দখল করে, তাই আপনার কম্পিউটার স্লো হতে পারে। তাই সব সময় এই অ্যাপস গুলো ডিলিট করে দেবেন। অথবা ওই অ্যাপসগুলো স্টার্টআপ অপশন অফ করে রাখুন।
Windows উইন্ডোজ আপডেট রাখুন
অনেক সময় আপনার উইন্ডোজ অনেকদিন ধরে আপডেট না নিলে, উইন্ডোজ ধীরে ধীরে স্লো হতে থাকে। তাই আপনার উইন্ডোজকে কয়েকদিন পরপর আপডেট দিয়ে রাখুন। আপনি চাইলে উইন্ডোজ এর অটো সিডিউল আপডেট চালু করে রাখতে পারেন। এতে করে উইন্ডোজ এর কোন আপডেট আসলে সেটা অটোমেটিক আপডেট হয়ে যাবে। এবং আপনি যে সময় নির্ধারণ করে দিয়েছেন ওই সময়ে উইন্ডোজটি আপডেট নিবে। এতে করে আপনার কাজের কোনো বিঘ্ন ঘটবে না।
কম্পিউটারের মধ্যে যথেষ্ট Ram রাখুন
আপনার কম্পিউটারের মধ্যে আপনার ব্যবহার অনুযায়ী যথেষ্ট Ram রাখার চেষ্টা করবেন। আপনি যদি সাধারন ইউজার হন তাহলে আপনার জন্য 4 থেকে 8 জিবি Ram-ই যথেষ্ট। আর আপনি যদি এডভান্স ইউজার হন সেক্ষেত্রে আপনার জন্য সর্বনিম্ন 16 জিবি Ram অবশ্যই দরকার। আপনার ব্যবহার অনুযায়ী যদি আপনার কম্পিউটারের Ram কম থাকে, সেক্ষেত্রে আপনার কম্পিউটার স্লো কাজ করবে।
computer Vairus কম্পিউটার ভাইরাস
আপনার কম্পিউটারে ভাইরাস আছে কিনা সেটা উইন্ডোজ ডিফেন্ডার দিয়ে কিছুদিন পরপর চেক করে নিন। ভাইরাস চেক করার জন্য আলাদা কোনো ভারী অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার না করাই উত্তম, আপনার উইন্ডোজ এর built-in উইন্ডোজ ডিফেন্ডার ব্যবহার করাই ভালো। কারণ বেশিরভাগ এন্টিভাইরাস গুলো আপনার ডিভাইসের অযথা Ram নষ্ট করবে এবং আপনার ডিভাইসের হার্ডডিস্ক দখল করবে।
আর যদি অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করতে চান, সে ক্ষেত্রে কখনোই ফ্রী এন্টিভাইরাস ব্যবহার করবেন না। কারণ ফ্রী এন্টিভাইরাস গুলোতে অনেক সময় বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস থাকে। সব সময় চেষ্টা করবেন ভালো কোম্পানির এবং কম এমবির অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করার।
Crack File ক্রাক ফাইল এর ব্যবহার
উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম এর পেইড অ্যাপস গুলো কিনতে অনেক টাকার প্রয়োজন হয়, তাই আমরা বিভিন্ন ধরনের ক্রাক অ্যাপস ব্যবহার করি। বেশিরভাগ ক্রাক অ্যাপসে বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস থাকে, যেগুলো আপনার কম্পিউটারকে স্লো করে দেয় এবং আপনার কম্পিউটারের পার্সোনাল ডাটা চুরি করে। টাইটাস টা করবেন অ্যাপস গুলো কিনে ব্যবহার করতে।
আর যদি ক্রাক অ্যাপস ব্যবহার করাই লাগে, তাহলে অবশ্যই ট্রাস্টেড ওয়েবসাইট থেকে ক্রাক অ্যাপস ডাউনলোড করে সেটা ব্যবহার করবেন। আর ব্যবহার করার আগে অবশ্যই অ্যাপস গুলো উইন্ডোজ দিয়ে স্ক্যান করে নিবেন। অ্যাপসে যদি কোন ধরনের ওয়ার্নিং আসে তাহলে সেটা ব্যবহার করবেন না।
Anti Vairus এন্টিভাইরাস এর ব্যবহার
আমরা আমাদের কম্পিউটারকে ভাইরাস থেকে বাঁচাতে বিভিন্ন ধরনের এন্টিভাইরাস ব্যবহার করি। বেশিরভাগ এন্টিভাইরাস গুলো অনেক ভারী অ্যাপস হয়। যার ফলে এন্টিভাইরাস গুলো আপনার কম্পিউটারের Ram এর একটি বড় অংশ ব্যবহার করে, এতে করে আপনার কম্পিউটার ধীরে ধীরে স্লো হয়ে যায়। তাই ভারী কোনো ধরনের এন্টিভাইরাস ব্যবহার করবেন না।
আপনার উইন্ডোজ যদি Windows 8 বা তার উপরের ভার্সন হয়, তাহলে উইন্ডোজের built-in যে এন্টিভাইরাস দেওয়া হয়েছে সেটা খুব ভালোভাবে কাজ করে তাই উইন্ডোজ ডিফেন্ডার ছাড়া আর কোনো আলাদা এন্টিভাইরাস এর ব্যবহার না করাই উত্তম। আর যদি আলাদা কোন এন্টিভাইরাস ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে তাহলে অবশ্যই লাইট-ওয়েট (কম সাইজের) এন্টিভাইরাস ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন। এতে করে আপনার কম্পিউটার স্লো হবে না।
আজকের পোষ্ট নিয়ে আমার শেষ কথা
আশা করি আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য অনেক কাজে আসবে।উপরের পয়েন্টগুলো যদি আপনি মেনে চলেন তাহলে অবশ্যই আপনার কম্পিউটার স্লো হবে না। উপরের পয়েন্টগুলো মানার পরেও যদি আপনার কম্পিউটার স্লো হয়, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনি কোন একটি ভালো কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারের কাছে আপনার কম্পিউটারটি নিয়ে যান। তিনি আপনার সমস্যার সমাধান আরো ভালোভাবে করে দিবে।
হয়তো আপনার কম্পিউটারের হার্ডওয়ার জনিত কোন সমস্যা থাকতে পারে। আপনার কম্পিউটারে যদি হার্ডওয়ারের সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়, তাহলে সেই কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার আপনার সেই সমস্যার সমাধান করে দেবে। আর যদি সমাধান না হয়, সে ক্ষেত্রে হার্ডওয়ারের যেই জায়গায় সমস্যা, সেই জায়গা তিনি পরিবর্তন করে দিবেন। এতে করে আপনার কম্পিউটার আবার ফাস্ট কাজ করবে।
আপনার কম্পিউটারের এসএসডি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে, আপনার যদি ডেক্সটপ কম্পিউটার হয় সে ক্ষেত্রে আপনি নিজেই সেই এসএসডি পাল্টাতে পারবেন। কিন্তু আপনার যদি ল্যাপটপ হয়, সেক্ষেত্রে এসএসডি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে আমি সাজেশন দিব আপনি কোন এক্সপার্ট এর সাহায্য নিবেন। কারণ ল্যাপটপের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ থাকে যেগুলো ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর যদি আপনি নিজেই এক্সপার্ট হন তাহলে নিজেরটা নিজেই পাল্টাতে পারবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে |