আগে জমির খাজনা পরিশোধ করার জন্য ভূমি অফিসের দরজায় বারবার যেতে হতো। এছাড়া খাজনা পরিশোধ করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ঝামেলার কারণে অনেক সময় নির্ধারিত ফির থেকে বেশি টাকা দেওয়া লাগতো। কিন্তু বর্তমানে সবকিছু ডিজিটাল হয়ে যাওয়ায় আপনারা অনলাইনের মাধ্যমে জমির খাজনা পরিশোধ করতে পারবেন।
জমির খাজনা পরিশোধ করার কিছু ধাপ রয়েছে সেগুলো যদি আপনি সঠিকভাবে অনুসরণ করেন তাহলে আপনার ঘরে বসেই জমির খাজনা পরিশোধ করতে পারবেন। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে আমরা জমির খাজনা কিভাবে অনলাইনে মাধ্যমে পরিশোধ করবেন সেটা সম্পর্কে জেনে আসি।
ভূমি উন্নয়ন কর কি?
অনেকেই যখন প্রথমবার জমির খাজনা দিতে যান তখন ভাবেন যে ভূমি উন্নয়ন কর কি। প্রতি শতাংশ জমির জন্য প্রতিবছর সরকারকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দেওয়াকে ভূমি উন্নয়ন কর বলে। ভূমি উন্নয়ন কর দেওয়ার পরে ভূমি অফিস থেকে একটি দাখিলা দেওয়া হয়। এই দাখিলা জমির মালিকানা প্রমাণের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
ভূমি উন্নয়ন কর জমি অনুযায়ী বিভিন্ন হতে পারে। যেমন গ্রামের জমির ভূমি উন্নয়ন কর শহরের জমির তুলনায় অনেকটাই কম থাকে। এছাড়া কৃষি জমির ক্ষেত্রে ভূমি উন্নয়ন কর সাধারণত থাকে না। আবার গ্রামের বাড়ির ভূমি উন্নয়ন কর থেকে শহরের বাড়ির ভূমি উন্নয়ন কর বেশি হয়ে থাকে। আশা করি ভূমি উন্নয়ন কর সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন।
জমির খাজনা দিতে কি কাগজ লাগে
জমির খাজনা দেওয়ার আগে আপনাকে কিছু কাগজপত্র সংগ্রহ করে রাখতে হবে সেগুলো নিচে দেওয়া হল:-
- একটি সচল মোবাইল নম্বর, যেটা সব সময় খোলা থাকবে।
- ভূমির মালিকের জাতীয় পরিচয় পত্র।
- পূর্বের কর রশিদ, যদি না থাকে তাহলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সংগ্রহ করুন।
- অনলাইন বা মোবাইল ব্যাংকিং পেমেন্ট সিস্টেম (যেমন: বিকাশ, নগদ)।
অনলাইনে জমির খাজনা পরিশোধের নিয়ম
আপনারা অনলাইনের মাধ্যমে দুই ভাবে জমির খাজনা পরিশোধ করতে পারবেন। একটি হচ্ছে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট (ldtax.gov.bd/citizen/register) এর মাধ্যমে এবং আরেকটি হচ্ছে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল অ্যাপস এর মাধ্যমে। আজকে আমরা ভূমি মন্ত্রণালয়ের অ্যাপস এর মাধ্যমে কিভাবে জমির খাজনা পরিশোধ করবেন সেটা সম্পর্কে জানব।
১.প্রথমে যে কোন এন্ড্রয়েড মোবাইল থেকে প্লে স্টোরে গিয়ে “ভূমি উন্নয়ন কর” অ্যাপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করুন।
২.তারপর অ্যাপ্লিকেশনটি ওপেন করার পরে নাগরিক কন্যার এবং অফিস কর্নার নামে দুটি অপশন পাবেন। যেহেতু আমরা নাগরিক তাই নাগরিক কন্যার অপশনটিতে ক্লিক করুন।
৩. এখন আপনাকে লগইন করতে বলবে। যদি আপনার অ্যাকাউন্ট থাকে তাহলে লগইন করবেন। আর যদি একাউন্ট না থাকে তাহলে রেজিস্ট্রেশন করুন।
৪. এখন আপনার একটি মোবাইল নম্বর, জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বার এবং জন্ম তারিখ দিয়ে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে হবে।
৫. রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে লগইন করুন। লগইন করার পরে আপনার প্রোফাইল ১০০% সম্পূর্ণ করতে হবে। সেটার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো সঠিকভাবে পূরণ করুন।
৬. উপরে বাম পাশে মেনু আইকনে ক্লিক করুন। তারপরে “নতুন খতিয়ান যুক্ত করুন” অপশনে ক্লিক করুন।
৭. নতুন খতিয়ান যুক্ত করার জন্য প্রথমে আপনাকে বিভাগ, জেলা, উপজেলা, এবং খতিয়ান নম্বর যুক্ত করতে হবে। চাইলে আপনার বাসার হোল্ডিং নম্বরও দিতে পারেন, আর যদি না থাকে প্রয়োজন নেই। এখন সবশেষে আপনার বর্তমান খতিয়ান এর স্ক্যান কপি এবং পূর্বের খতিয়ানের স্কিন কপি আপলোড করতে হবে। যে কোন কম্পিউটার দোকানে গিয়ে অথবা প্লে স্টোরে ক্যাম স্ক্যানার নামে একটি অ্যাপ্লিকেশন রয়েছে, সেখান থেকে সেটা নামিয়ে স্ক্যান করে এখানে আপলোড করুন।
৮. নতুন খতিয়ান যুক্ত করার জন্য স্ক্যান কপিগুলো আপলোড হওয়ার পরে ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আপনার খতিয়ান টি যুক্ত হবে। তাই চিন্তা করার কোনো কারণ নেই। এছাড়া খতিয়ান যুক্ত হওয়ার আগে কোন ধরনের পেমেন্ট করতে পারবেন না। তাই ভেরিফিকেশনের জন্য কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন।
৯. খতিয়ান যুক্ত হওয়ার পরে পেমেন্ট অপশনটিতে ক্লিক করুন। পেমেন্ট অপশনটিতে ক্লিক করলে আপনার যতগুলো খতিয়ান দেওয়া আছে সবগুলো দেখতে পাবেন। এবং খুব সহজে সেখান থেকে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করতে পারবেন।
১০. পেমেন্ট করার পরে দাখিলা পাওয়ার জন্য আপনাকে ভূমি অফিসে যাওয়া লাগবে না। উপরে বাম পাশের থ্রি ডট অপশনে ক্লিক করার পরে দাখিল অপশনটি ক্লিক করলে সেখান থেকে যে খতিয়ান গুলোর পেমেন্ট সম্পন্ন করেছেন সেগুলোর দাখিলা দেখতে পাবেন। সেখান থেকে দাখিলা গুলো ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিতে পারবেন।
জমির খাজনা অনলাইন পেমেন্ট
জমির খাজনার পেমেন্ট করার জন্য যে কোন মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে সম্পূর্ণ করতে হবে। বিকাশ বা নগদে ভূমি উন্নয়ন কর নামে একটি পেমেন্ট অপশন পাবেন সেখান থেকে আপনার ভূমি উন্নয়ন করের আইডি দিয়ে পেমেন্ট সম্পন্ন করবেন।পেমেন্ট করা খুবই সহজ। সেটা আপনারা অবশ্যই পারবেন।
অনলাইনে খাজনা দেওয়ার নিয়ম
উপরে আমরা অনলাইনে কিভাবে জমির খাসনা পরিশোধ করবেন সেটা সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আপনারা চাইলে বমি অফিসের অফিসের ওয়েবসাইট থেকেও জমির খাস না পরিশোধ করতে পারবেন।
যেহেতু ভূমি উন্নয়ন করের অফিসিয়াল এপ্লিকেশন রয়েছে, তাই আমার সাজেশন থাকবে অফিসিয়াল অ্যাপ্লিকেশন থেকে ভূমি উন্নয়ন কর বা জমির খাজনা পরিশোধ করবেন। কারণ এটা অনেক বেশি সহজ। এছাড়া কোন ধরনের ঝামেলায় পড়তে হয় না।