অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের নিয়ম একটি দেশের সকল ধরনের নাগরিক সুবিধা পেতে হলে সেই দেশের জাতীয় পরিচয় পত্র থাকাটা অত্যন্ত জরুরী। আপনি যদি একটি দেশের নাগরিক হোন এবং প্রাপ্তবয়স্ক হন তাহলে অবশ্যই আপনাকে জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি করা বাধ্যতামূলক।
আমরা বিভিন্নভাবে বিভিন্ন উপায়ে জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি করি। আমাদের বাংলাদেশ আপনি চাইলে অনলাইনের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া আপনি চাইলে আপনার নিকটস্থ উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিস এর মাধ্যমেও জাতীয় পরিচয় পত্র আবেদন করতে পারবেন।
আমাদের মধ্যে অনেকেরই জাতীয় পরিচয়পত্র করার সময় বিভিন্ন ধরনের ভুল হয়ে থাকে অথবা যারা জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্য গুলো এন্ট্রি করে তারা বিভিন্ন ধরনের ভুল করে থাকে। যার কারণে আমরা বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হই। আপনি যদি আপনার ওই জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন না করেন, তাহলে আপনি অনেক বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। আজকের পোস্ট এর মাধ্যমে আমরা জানবো কিভাবে আপনারা অনলাইনের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের আবেদন করতে পারবেন। তাহলে চলুন শুরু করা যাক অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের নিয়ম
You may also like:
জন্ম নিবন্ধন যাচাই ও অনলাইন কঁপি ডাউনলোড
অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন
১. প্রথমে এই ওয়েবসাইটে (https://services.nidw.gov.bd/) গিয়ে আপনার ইউজার নেম এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন। আপনার যদি একাউন্ট না থাকে তাহলে রেজিস্ট্রেশন করে নিন।
২. তারপরে আপনি বিস্তারিত প্রোফাইলে ক্লিক করুন। তাহলে আপনার সকল তথ্য দেখতে পাবেন।
৩. বিস্তারিত প্রোফাইল অপশন আসার পরে আপনি উপরে ডানদিকে “এডিট” বাটন এ ক্লিক করলে আপনি আপনার সকল তথ্য এডিট করতে পারবেন। এখান থেকে আপনি আপনার যে তথ্যগুলো সংশোধন করার প্রয়োজন সেই তথ্যগুলো সংশোধন করে নিতে পারবেন।
৪. তথ্যগুলো পরিবর্তন করার পরে “পরবর্তী” অপশনে ক্লিক করুন। পরবর্তী অপশনে ক্লিক করার পরে, আপনাকে আপনি যে তথ্যগুলো সংশোধন করেছেন সে তথ্যগুলো আবার পুনরায় দেখাবে। আপনার তথ্যগুলো যদি সঠিক থাকে তাহলে আবার “পরবর্তি” অপশনে ক্লিক করুন।
৫. এখন আপনাকে আপনার সংশোধন তথ্যের ওপর ভিত্তি করে সংশোধন ফি প্রদান করতে বলবে। আপনি চাইলে মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে সংশোধন ফি প্রদান করতে পারবেন।
বিকাশ বা নগদে গিয়ে টেবিল অপশনে nid লিখে সার্চ করলে আপনার কাঙ্ক্ষিত পেমেন্ট অপশন পেয়ে যাবেন। সেখানে আপনি আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর এবং আপনার কি ধরনের সংশোধন করবেন সেই অপশনটা সিলেক্ট করলেই আপনাকে কত টাকা পে করতে হবে সেটা অটোমেটিক দেখাবে। মনে রাখবেন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আলাদা কিছু ফি থাকে, তাই একাউন্টে কিছু বেশি টাকা রাখবেন।
আপনি পেমেন্ট করার সাথে সাথেই আপনাকে জাতীয় পরিচয় পত্র ওয়েবসাইটে সেটা দেখাবে। আগে ডিপোজিট শো করতে একটু দেরি হতো।
৬. পেমেন্ট করার পরে, আপনি জাতীয় পরিচয় পত্র ওয়েবসাইটে পরবর্তী অপশনে ক্লিক করুন।
৭. তারপর আপনাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের স্ক্যান কপি গুলো আপলোড করতে বলবে। আপনি যে বিষয়টা সংশোধন করবেন তার উপর ভিত্তি করে কাগজপত্রের স্ক্যান কপি আপলোড করবেন।
৮. স্ক্যান কপি গুলো আপলোড করার পরে আপনাকে পুনরায় আবার আপনার সংসোধন করা তথ্য গুলো দেখাবে। আপনার যদি সব কিছু ঠিক থাকে, তাহলে “সাবমিট” অপশনে ক্লিক করার পরে আপনাকে একটি পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করতে বলবে।
পিডিএফ ফাইলটি ডাউনলোড করে রাখুন। যদি আপনাকে পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিসে ডাকা হয়, তাহলে আপনাকে এই পিডিএফ ফাইল প্রিন্ট করে সাথে নিয়ে যেতে হবে। এই পিডিএফ ফাইল এর মধ্যে আপনার সংশোধন করা তথ্যগুলো থাকবে। পরবর্তী নির্বাচন কমিশন আপনার সাথে মেসেজ এর মাধ্যমে যোগাযোগ করবে।
জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন ফি
১. আপনি যদি আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম, বাংলায় পিতা ও মাতার নাম, ইংরেজিতে জন্ম তারিখ ও এনআইডি নাম্বার, স্বাক্ষর এবং পেছনে বাংলায় ঠিকানা, ইংরেজিতে রক্তের গ্রুপ ও জন্মস্থান ইত্যাদি। অর্থাৎ জাতীয় পরিচয় পত্রের সামনে এবং পিছনে যে তথ্যগুলো থাকে এগুলো সংশোধন করতে হলে প্রথমবার সংশোধন আবেদনের সময় ২৩০ টাকা, দ্বিতীয়বার ৩৪৫ টাকা এবং তারপর থেকে প্রতিবার সংশোধন আবেদনের জন্য ৫৭৫ টাকা জমা দিতে হবে।
২. আপনি যদি আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের পেশা, পাসপোর্ট ও মোবাইল নম্বর, শিক্ষাগত যোগ্যতা ইত্যাদি সংশোধন করতে চান তাহলে সংশোধন ফি ১১৫ টাকা জমা দিতে হবে।
আগে সংশোধন ফি জমা দেওয়া ৩০ মিনিট পর সংশোধন করা যেত। কিন্তু বর্তমানে সংশোধন ফি জমা দেওয়ার সাথে সাথেই আপনি সংশোধন করতে পারবেন।
জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধন করতে কি কি লাগবে
১. আপনি যদি আপনার নিজের নাম সংশোধন করতে চান, তাহলে আপনার জন্ম নিবন্ধনের অনলাইন কপি এবং আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার স্ক্যান কপি আপলোড করুন।
২. আপনি যদি আপনার মা বাবার নাম সংশোধন করতে চান, তাহলে তাদের জাতীয় পরিচয় পত্রের স্ক্যান কপি অথবা অনলাইন জন্ম নিবন্ধনের স্ক্যান কপি আপলোড করুন।
৩. আপনি যদি আপনার জন্ম তারিখ পাল্টাতে চান, সেক্ষেত্রে আপনার অনলাইন জন্ম নিবন্ধনের স্ক্যান কপি এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার স্ক্যান কপি আপলোড করুন।
৪. আপনি যদি আপনার ঠিকানা পাল্টাতে চান, তাহলে আপনার জন্ম নিবন্ধনের স্ক্যান কপি, বিদ্যুৎ বা টেলিফোন বা গ্যাস বিলের স্ক্যান কপি এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার স্ক্যান কপি আপলোড করুন।
৫. আপনি যদি আপনার পুরো নামটাই বদলে ফেলতে চান (যেমন: রহিম উদ্দিন থেকে করিম উদ্দিন) বা ধর্ম পাল্টাতে চান, তাহলে অবশ্যই আপনাকে ইউনিয়ন বা পৌর বা সিটি কর্পোরেশন থেকে প্রার্থীর নাম সংক্রান্ত প্রত্যয়নপত্র অথবা আপনি যদি চাকরি করেন তাহলে অফিস থেকে একটি প্রত্যয়ন পত্র জমা দিতে হবে।
৬. আপনার পিতা বা মাতার নামের পূর্বে “মৃত”শব্দটি যুক্ত করার জন্য অবশ্যই আপনাকে ইউনিয়ন বা পৌর বা সিটি কর্পোরেশন থেকে তাদের মৃত্যু সার্টিফিকেট এনে সেটা জমা দিতে হবে।
মনে রাখবেন, উপরের কাগজগুলো জমা দেওয়ার আগে অবশ্য সেগুলো সত্যায়িত করে নিবেন। এ কাগজগুলো যারা সত্যায়িত করতে পারবেন তারা হলেন সংসদ সদস্য, স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, গেজেটেড সরকারি কর্মকর্তা এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান।
জাতীয় পরিচয় পত্র সংশোধনের যে কাগজপত্রগুলো লাগতে পারে
১. এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার সনদ পত্রের স্ক্যান কপি।
২. বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, টেলিফোন বিল ইত্যাদির স্ক্যান কপি।
৩. অনলাইন জন্ম নিবন্ধন এর বাংলা এবং ইংরেজি স্ক্যান কপি।
৪. বিবাহের কাবিননামা স্ক্যান কপি (ইত্যাদি)
সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।
Pingback: ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন করতে কতদিন লাগে - Votar Id Card