পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে করণীয় এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণ করার জন্য বা এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাসপোর্ট ছাড়া আপনি এক দেশ থেকে অন্য দেশে যেতে পারবেন না। হয়তো কিছু দেশে ভিসা ছাড়া আপনি যেতে পারবেন, কিন্তু পাসপোর্ট ছাড়া আপনি কোন দেশে যেতে পারবেন না।
অনেকেই পাসপোর্ট তৈরি করার পরে বিভিন্ন ভাবে হারিয়ে ফেলে। হারানো পাসপোর্ট পাওয়া খুবই মুশকিল। তবুও কিছু উপায় অবলম্বন করে আপনি আপনার হারানো পাসপোর্ট ফিরে পেতে পারেন, সেগুলো নিয়ে আমরা আজকে আলোচনা করব। যাদের পাসপোর্ট হারায়নি তারাও আজকের পোস্টটি দেখে নিতে পারেন। এতে ভবিষ্যতে আপনার অনেক উপকার হবে। তাহলে চলুন শুরু করি পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে করণীয় |
আরো দেখে আসতে পারেনঃ
পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন
অনলাইনের মাধ্যমে আপনি চাইলে নতুন পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে পারেন। এছাড়া আপনি চাইলে আপনার নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে নতুন পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে পারেন। আপনি পাসপোর্ট কত দিনের মধ্যে পেতে চান তার ওপর ভিত্তি করে আপনার ফি নির্ধারিত হবে।
নতুন পাসপোর্ট আবেদন করার ক্ষেত্রে অনেকেই বিভিন্ন দালালের ফাদে পরে হাজার হাজার টাকা নষ্ট করে ফেলে। তাই নতুন পাসপোর্ট আবেদনের ক্ষেত্রে কোন দালালের ফাদে না পড়ে, আপনি সরাসরি আপনার নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে কিছু ফি প্রদান করে তাড়াতাড়ি পাসপোর্ট পেতে পারেন।
দেশের মধ্যে পাসপোর্ট হারালে করণীয়
আপনার পাসপোর্টটি যদি আপনার নিজের দেশে হারিয়ে যায় তাহলে আপনাকে খুব বেশি ঝামেলায় পড়তে হবে না। আপনি আপনার পাসপোর্ট এর ফটোকপি বা আপনার জরুরী কাগজপত্র নিয়ে থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করুন। এবং সেই ডাইরির একটি কপি নিয়ে আপনার নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে অথবা অনলাইনে “পাসপোর্ট রিইস্যু” জন্য আবেদন করুন। রিইশু আবেদন করার জন্য হয়তো কিছু ফি লাগতে পারে|
আবেদন করার কিছু দিনের মধ্যেই আপনি আপনার নতুন পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন। সেই পাসপোর্টে আপনি আগে কোন কোন দেশ ভ্রমণ করেছেন সেই তথ্যগুলো উল্লেখ থাকবে। পাসপোর্ট রিইস্যু আবেদন করার জন্য অবশ্যই আপনার পাসপোর্টে যে ডকুমেন্ট (যেমন: জাতীয় পরিচয় পত্র বা জন্ম নিবন্ধন) দিয়ে তৈরি করা হয়েছে, সেই ডকুমেন্ট এর একটি কপি পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে অথবা অনলাইনে স্ক্যান কপি জমা দিতে হবে।
থানায় সাধারণ ডায়েরি করার সময় অবশ্যই কোন কম্পিউটার দোকান থেকে টাইই করে নিবেন। কারণ বর্তমানে হাতের লেখার সাধারণ ডায়েরির আবেদন গ্রহণ করা হয় না। আপনার যদি কম্পিউটার থাকে তাহলে আপনি নিজেও এই কাজ করতে পারেন। আপনি অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের সাধারণ ডায়েরি ডেমো পেয়ে যাবেন। সেই ডেমোর জায়গায় শুধুমাত্র আপনার নাম ব্যবহার করেও সাধারণ ডায়েরির অ্যাপ্লিকেশন লিখতে পারেন।
তবে অনলাইনে রি-ইস্যুর আবেদনের চেয়ে আপনি সরাসরি আপনার নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে পাসপোর্ট রি-ইস্যু আবেদন করুন। এতে করে আপনার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলো সাথে নিয়ে গেলেই অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আপনি আপনার পাসপোর্ট হাতে পেয়ে যাবেন।
আরো দেখে আসতে পারেনঃ
পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে ভিসা চেক |
বিদেশে বা দেশের বাইরে পাসপোর্ট হারালে করণীয়
আপনি বিদেশে অবস্থানরত অবস্থায় যদি পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলেন তাহলে দেরি না করে আপনার নিকটস্থ থানায় গিয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করুন। থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি করার সময় অবশ্যই সাথে কাগজপত্র রাখবেন।
থানায় সাধারণ ডায়েরি করার পরে সেই ডায়েরির একটি কপি আপনি আপনার নিজের দেশের দূতাবাস বা কনস্যুলেট অফিস (আপনি যে দেশে অবস্থান করছেন সেই দেশে পেয়ে যাবেন) এগিয়ে পাসপোর্ট রি-ইস্যু জন্য আবেদন করতে পারবেন। আপনি চাইলে অনলাইনের মাধ্যমেও পাসপোর্ট রি-ইস্যু জন্য আবেদন করতে পারবেন।
তবে আমার পরামর্শ থাকবে অনলাইনে পাসপোর্ট রি-ইস্যুর আবেদন না করে আপনি সরাসরি দূতাবাসে বা কনস্যুলেট অফিসে গিয়ে পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করুন। এতে করে আপনি তাড়াতাড়ি আপনার পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন। কারণ অনলাইনে পাসপোর্ট রি-ইস্যু আবেদন করলে সেটার কার্যক্রম হতে অনেক সময় লেগে যাবে। এতে করে আপনি অনেক ধরনের সমস্যায় পড়তে পারেন।
হারানো পাসপোর্ট পেতে হলে অবশ্যই আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র বা জন্ম নিবন্ধন, হারানো পাসপোর্ট এর পৃষ্ঠা সমূহের ফটোকপি (যদি থাকে), পাসপোর্ট হারানোর জিডি করার একটি কপি নিয়ে যাবেন।
ট্রাভেল পাস সংগ্রহ
পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে করণীয়
অন্য দেশের পাসপোর্ট হারালে যেহেতু পাসপোর্ট পেতে একটু সময় লাগবে, তাই অবশ্যই সেই দেশে ঘোরাঘুরি করার জন্য দূতাবাস কিংবা কনস্যুলেট অফিস থেকে ট্রাভেলস সংগ্রহ করবেন। এতে করে সেই দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আপনাকে ধরলেও ট্রাভেল পাস দেখালে আপনাকে ছেড়ে দিবে।
পাসপোর্ট হারালে পুলিশের সাহায্য নেওয়া
পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে করণীয়
বিদেশে বা দেশে যদি আপনার পাসপোর্ট বা ভিসা হারিয়ে যায়, তাহলে আপনাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করবে পুলিশ। পাসপোর্ট বা ভিসা হারানোর পরে আপনি যদি পুলিশ ডায়েরী না করেন তাহলে কোন পাসপোর্ট অফিস বা দূতাবাস বা কনস্যুলেট অফিস আপনার কোনো আবেদন গ্রহণ করবে না।
আর পাসপোর্ট রি-ইস্যু ক্ষেত্রে কোন ধরনের দালালের ফাঁদে পড়বেন না। কারণ দালালের ফাঁদে পরে আপনার শুধু টাকা নষ্ট হবে, পাসপোর্ট পেতে যে সময় লাগার কথা ঠিক ওই সময় লাগবে। বেশি তাড়াতাড়ি পাসপোর্ট পাওয়ার আশায় নিজের পার্সোনাল ডিটেলস অন্য কাউকে দিতে যাবেন না। এতে করে আপনি ভবিষ্যতে বিপদে পড়ার সম্ভাবনা বেশি থাকবে।
পাসপোর্ট এর নম্বর বা পাসপোর্ট এর কোন কপি না থাকলে করনীয়
পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে করণীয়
আমাদের মধ্যে অনেকেই পাসপোর্ট পাওয়ার পরে সেটার কোন ধরনের ফটোকপি রাখিনা। এছাড়া অনেকেরই পাসপোর্ট এর ফটোকপি গুলো হারিয়ে যায়। পাসপোর্ট হারানোর পরে পাসপোর্ট এর নম্বর জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আপনি পাসপোর্ট রি-ইস্যু করার জন্য ও পাসপোর্ট নম্বর লাগবে। যদি আপনার পাসপোর্ট নম্বর বা পাসপোর্ট এর কোন কপি না থাকে, তাহলে আপনি আপনার নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে আপনার জন্ম নিবন্ধন বা জাতীয় পরিচয় পত্র দেখালেই তারা আপনার পাসপোর্ট এর ডিটেলস বের করে দিবে।
আর যদি আপনি দেশের বাইরে পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলার পরে কোন ধরনের কপি না রাখেন, তাহলে আপনার দেশের দূতাবাস বা কনস্যুলেট অফিসে গিয়ে আপনার জন্ম নিবন্ধন অথবা জাতীয় পরিচয় পত্র দেখালেই তারা আপনার পাসপোর্ট এর সকল তথ্য বের করে দিতে পারবে। এসব বিষয় নিয়ে চিন্তা করে কোনো ধরনের ভুল সিদ্ধান্ত নিতে যাবেন না। তাহলে ভবিষ্যতে আপনি বিপদে পড়তে পারেন।
এছাড়া দেশের বাইরে যদি আপনি পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলেন তাহলে আপনার নির্দিষ্ট অবস্থান থেকে বাইরে কম ঘোরাফেরা করার চেষ্টা করবেন। কারন আপনার কাছে যদি বিদেশে যথেষ্ট কাগজপত্র না থাকে তাহলে ওই দেশের পুলিশ আপনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে এবং কি আপনাকে গ্রেফতার করতে পারে। অযথা কোন ধরনের ভেজালে জড়াবেন না। এতে করে আপনি আরো বেশি বিপদে পড়বেন।
তবে আপনি যদি চান আপনার পরিচিত বা আত্মীয় কাউকে দিয়ে পাসপোর্ট এর কাজ করিয়ে নিতে পারেন। এতে করে আপনি খুব তাড়াতাড়ি আপনার পাসপোর্ট পেয়ে যাবেন। আর বিদেশে পাসপোর্ট হারানোর পরে অবশেষে দেশের পরিচিত কারো থেকে সাহায্যের জন্য চেষ্টা করবেন। কারণ বিদেশে পাসপোর্ট ছাড়া চলাফেরা খুবই মারাত্মক হতে পারে।
আশা করি আজকের পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।
ধন্যবাদ সবাইকে |
আরো দেখে আসতে পারেনঃ
বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট (Biometric Passport) কি? আবেদন ও সংশোধন করার নিয়ম