নতুন জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য আবেদন জাতীয় পরিচয় পত্র প্রতিটি দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। জাতীয় পরিচয় পত্র ছাড়া আপনি একটি দেশের নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা পাবেন না।
এছাড়া সরকারি কোন কাজ আপনি জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া করতে পারবেন না। আগে বিভিন্ন ইউনিয়নে গিয়ে জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি করা হতো। বর্তমানে কিন্তু খুব সহজেই অনলাইনের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
অনলাইনের মাধ্যমে কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম অনুসরণ করে আপনি নিজের আবেদন নিজেই করতে পারবেন।
দেখে আসতে পারেন
জন্ম নিবন্ধন অনলাইনে চেক করার নিয়ম
জাতীয় পরিচয় পত্র করতে যেসব যোগ্যতা থাকা দরকার
জাতীয় পরিচয় পত্র করতে নিম্নলিখিত যোগ্যতা থাকতে হবে|
১. বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে।
৩. কোন ব্যক্তির বয়স ১৫ বছরের কম হওয়া যাবে না।
৪. পূর্বে জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য নিবন্ধন করা হয়নি এমন ব্যক্তি।
তাহলে চলুন জেনে নিই অনলাইনে কিভাবে নতুন জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য আবেদন করবেন।
নতুন জাতীয় পরিচয় পত্রের আবেদন করার নিয়ম
প্রথম ধাপ: প্রথমে এই লিংকে (https://services.nidw.gov.bd/nid-pub) প্রবেশ করে “আবেদন করুন” এ ক্লিক করুন |
দ্বিতীয় ধাপ: তারপর আপনার পুরো নাম (সঠিক নাম), জন্ম তারিখ এবং ক্যাপচা দিয়ে “বহাল” এ ক্লিক করুন
তৃতীয় ধাপ: এখানে আপনি আপনার একটি সঠিক মোবাইল নাম্বার দিবেন (যেটা সব সময় চালু থাকবে)। যে ব্যক্তির জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য আবেদন করবেন, সেই ব্যক্তির মোবাইল নাম্বার দিবেন।
আপনি যে মোবাইল নম্বরটা দেবেন সেই নাম্বারে একটা কোড আসবে, সেই কোডটা দিয়ে “বহাল” এ ক্লিক করুন…
চতুর্থ ধাপ: এই ধাপে আপনাকে একটি ইউনিক ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড দিতে হবে। এই ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে পরবর্তীতে আপনি আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র ডাউনলোড, সংশোধন ইত্যাদির মতো কাজ করতে পারবেন।
পাসওয়ার্ড অবশ্যই ৮ ডিজিটের দিবেন। পাসওয়ার্ড যদি না নেয় সেক্ষেত্রে কিছু সংখ্যা, কিছু অক্ষর এবং চিহ্ন মিলিয়ে দিবেন (যেমন: 123abD#)।
ইউজারনেম যদি অলরেডি এক্সিট দেখায়, তাহলে বারবার পাল্টিয়ে দেবেন।
পঞ্চম ধাপ: আপনি একটু আগে যে ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড দিয়েছেন, ওই ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে পুনরায় লগইন করুন। তারপরে “প্রোফাইল” অপশনে ক্লিক করুন…
ষষ্ঠ ধাপ: তারপরে উপরে ডানপাশে “এডিট” অপশনে ক্লিক করে, আপনার পার্সোনাল তথ্য গুলো পূরণ করে নিন। এই তথ্যগুলো আপনার ডকুমেন্ট অনুযায়ী পূরণ করবেন।
এখানে আপনার সকল তথ্য এবং আপনার মা-বাবার জাতীয় পরিচয় পত্রের তথ্য পূরণ করতে হবে। মনে রাখবেন (*) চিহ্নের তথ্য গুলো অবশ্যই পুরন করতে হবে।
সপ্তম ধাপ: ব্যক্তিগত তথ্য পূরণ হলে,”অন্যান্য তথ্য” অপশনে ক্লিক করে সেগুলো পূরণ করে নিন। এখানে আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ অন্যান্য তথ্য পূরণ করতে হবে।
অষ্টম ধাপ: অন্যান্য তথ্য পূরণ শেষ হলে “ঠিকানা” অপশনে ক্লিক করুন। এখানে আপনি আপনার বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা সঠিকভাবে পূরণ করবেন।
এছাড়া আপনি কোন জায়গার ভোটার হতে চান সেটাও টিক চিহ্ন দিয়ে দিতে হবে। আপনি যদি বর্তমান ঠিকানায় ভোটার হতে চান তাহলে সাথে টিক চিহ্ন দিয়ে দিবেন, আর যদি স্থায়ী ঠিকানায় ভোটার হতে চান সে ক্ষেত্রে স্থায়ী ঠিকানার সাথে টিক চিহ্ন দিয়ে দিবেন।
নবম ধাপ: আপনার উপরের তথ্যগুলো যদি সম্পূর্ণ পূরণ করে থাকেন, তাহলে আরেকবার সেগুলো চেক করে নিন।
সেগুলো চেক করার পরে এখানে আপনার কাগজপত্র আপলোড করুন। কাগজপত্র আপলোড করার পরে “সাবমিট” এ ক্লিক করুন।
সাবমিট এ ক্লিক করার পরে আপনাকে একটি পিডিএফ ডাউনলোড করতে বলবে সেটা ডাউনলোড করে রাখুন। পরবর্তীতে যখন আপনাকে আপনার নিকটস্থ নির্বাচন কমিশন অফিসের ডাকা হবে, তখন এই ফরমটি প্রিন্ট করে সেখানে নিয়ে যাবেন।
জাতীয় পরিচয় পত্র করতে কি কি কাগজপত্র লাগবে
- অনলাইন জমা দেওয়া ফর্মের প্রিন্ট কপি
- S.S.C. অথবা সমমানের সার্টিফিকেট (বয়স প্রমাণের জন্য)
- জন্ম সনদ (বয়স প্রমাণের জন্য)
- পাসপোর্ট / ড্রাইভিং লাইসেন্স / টিন সার্টিফিকেট (বয়স প্রমাণের জন্য)
- বাবা, মা, স্বামী/স্ত্রীর আইডি কার্ডের ফটোকপি (অবশ্যই)
- ইউটিলিটি বিলের কপি/বাড়ি ভাড়ার রসিদ/হোল্ডিং ট্যাক্স রসিদ (ঠিকানার প্রমাণের ক্ষেত্রে)
- নাগরিকত্ব সনদ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
অনলাইনে তথ্য পূরণ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই সঠিকভাবে পূরণ করবেন। এখানে যদি আপনি ভুল করেন, সেক্ষেত্রে ভুল ঠিক করতে আপনাকে অবশ্যই নির্বাচন কমিশন অফিসে যেতে হবে। হয়তো অনেক ঝামেলায় ও পড়তে পারেন।
ভেরিফিকেশন প্রসেস
আপনি যখন অনলাইনে জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য আবেদন করবেন, তখন সেটা আপনার নিকটস্থ উপজেলা নির্বাচন কমিশন অফিসের সার্ভারে জমা হয়ে যাবে।
নির্বাচন কমিশন অফিসের কর্মকর্তারা আপনার তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করে, আপনাকে আপনার আঙ্গুলের ছাপ এবং চোখের স্ক্যান দিতে নির্বাচন কমিশন অফিসে ডাকবে। আপনি অনলাইনে আবেদন করার সময় যে মোবাইল নম্বর দিয়েছেন সেই মোবাইল নম্বরের মেসেজের মাধ্যমে আপনাকে ডাকা হবে।
কিছু কিছু সময় ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই ডাকা হয়, কিন্তু অনেক সময় অনেক দেরি তো ডাকানো হয়। আপনি আবেদন করার পরে যদি আপনাকে অনেকদিন ধরে না দেখানো হয়, সেক্ষেত্রে আপনি আপনার নিকটস্থ নির্বাচন কমিশন অফিসে গিয়ে আপনার আবেদন এর স্থিতি জেনে নিতে পারবেন।
সেখানে যাওয়ার সময় অবশ্যই আপনার অনলাইন আবেদন ফরমের প্রিন্ট কপি এবং অন্যান্য ডকুমেন্ট এর ফটোকপি গুলো সাথে নিয়ে যাবেন।
জাতীয় পরিচয় পত্র ডাউনলোড
বর্তমানে যেহেতু জাতীয় পরিচয় পত্রের হার্ডকপি দেওয়া হচ্ছে না। তাই যখন আপনার ভেরিফিকেশন প্রসেস সম্পূর্ণ হবে, তখন আপনাকে আপনার আবেদন করার সময় যে মোবাইল নম্বর দিয়েছেন সেখানে একটি মেসেজ এর মাধ্যমে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর দিয়ে দেওয়া হবে।
সেই জাতীয় পরিচয় পত্র নম্বর দিয়ে আপনি অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে, নতুন জাতীয় পরিচয় পত্র ডাউনলোড করতে পারবেন। এবং সেটা বাংলাদেশের সকল কাজে ব্যবহার করতে পারবেন। তবে বর্তমানের অনলাইন জাতীয় পরিচয় পত্র ক্ষেত্রে নতুন করে আর রেজিস্ট্রেশন করা লাগেনা।
আপনি আবেদনের সময় সেই ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড দিয়েছেন, সেটা দিয়ে লগইন করে আপনি আপনার জাতীয় পরিচয় পত্র ডাউনলোড করতে পারবেন।
যখন আবার জাতীয় পরিচয় পত্রের হার্ডকপি প্রদান শুরু হবে, তখন আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের হার্ডকপি ও আপনাকে দিয়ে দেওয়া হবে|
অনলাইন আবেদন পূরণের ক্ষেত্রে করণীয়তা
জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার কোন একটি কাগজপত্রের সাথে মিল রেখে তথ্য পূরণ করবেন।
আপনার তথ্য যদি কোনো কারণে ভুল হয়, তাহলে আপনি যখন নির্বাচন কমিশন অফিসে আঙ্গুলের ছাপ এবং চোখের স্ক্যান দিতে যাবেন, তখন সেখানের কম্পিউটার অপারেটরকে বললেই তারা সংশোধন করে দিবে। তাই এটা নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই।
অনেকেই তথ্য ভুল হলে, নতুন করে আবার আবেদন করেন। এটা কখনোই করা যাবে না। কারণ একজন ব্যক্তি দুটি জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি করা দন্ডনীয় অপরাধ। এছাড়া নির্বাচন কমিশন অফিসের কর্মকর্তারা যখন দেখবে একটু ডিটেলস এর দুইজন ব্যক্তি, তখন তারা আপনাকে আবার নির্বাচন কমিশন অফিসে ডাকাবে।
তখন সেখানে যাওয়ার সময় অবশ্যই আপনাকে আপনার চেয়ারম্যান বা কাউন্সিল কর্তৃক প্রত্যয়ন পত্র নিয়ে যেতে হবে। পারলে আরো কিছু কাগজপত্র নিয়ে যাবেন (যেমন: শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট, প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড ইত্যাদি)।
আরেকটা ভূল অনেকেই করেন সেটা হলো, আপনাকে যখন বা যে তারিখে নির্বাচন কমিশন অফিস থেকে মেসেজের মাধ্যমে ডাকানো হয়, তখন আপনি সেই তারিখে যান না। এটা কিছু কিছু সময় সমস্যা না হলেও, বেশিভাগ সময় অফিসের কর্মকর্তারা সমস্যা করে। তাই অবশ্যই আপনাকে যে তারিখে ডাকানো হবে, সেই তারিখেই যাওয়ার চেষ্টা করবেন।
আজকের পোষ্ট নিয়ে শেষ কথা
আশা করি আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক কাজে আসবে। আর্টিকেল এর মধ্যে কোন ভুলত্রুটি থাকলে অবশ্যই সেটা ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন। উপরে যে সব ইনফরমেশন গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে সঠিকভাবে মেনে আমরা খুব সহজেই নতুন জাতীয় পরিচয় পত্রের জন্য আবেদন করতে পারবো|
ধন্যবাদ সবাইকে |
জাতীয় পরিচয় পত্র (NID) নিয়ে সকল সমস্যার সমাধান জেনে নিন | নতুন আবেদন ও সংশোধন
Pingback: জন্ম নিবন্ধন আবেদন পত্র প্রিন্ট করার নিয়ম -
Pingback: ভোটার আইডি কার্ড চেক ও আইডি কার্ড ডাউনলোড করার উপায়