টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড, আবেদন, সংশোধন যারা একটি দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক কাজের সাথে জড়িত তারা অবশ্যই টিন সার্টিফিকেট এর সম্পর্কে জানেন। টিন সার্টিফিকেট একটি দেশের নাগরিকের বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কাজে লাগে। বিশেষ করে ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন বিনিয়োগকারীদের এই টিন সার্টিফিকেট অনেক বেশি প্রয়োজন হয়।
এই টিন সার্টিফিকেট ছাড়া আপনি বাংলাদেশের অনেক ধরনের অর্থনৈতিক কাজ থেকে বঞ্চিত হবেন।
You Also Read:
ই টিন সার্টিফিকেট করার নিয়ম 2022
টিন সার্টিফিকেট কি?
টিন সার্টিফিকেট মূলত একজন নাগরিকের বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্যাক্স আইডি। একজন নাগরিক বা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর তার দেশের সরকারকে কি পরিমাণ ট্যাক্স প্রদান করবে সেটা তার ওই টিন সার্টিফিকেট অনুযায়ী নির্ধারিত হবে। এছাড়া টিন সার্টিফিকেট এর কারণে একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর কি পরিমান ট্যাক্স সরকারকে দিচ্ছে সেটা হিসাব খুব সহজেই করা যায়।
যার ফলে সরকার বিভিন্ন অবৈধ ইনকাম প্রতিরোধ করতে পারে। একজন ব্যক্তি যদি তার ইনকাম অনুযায়ী একটি দেশের নির্ধারিত ট্যাক্স প্রদান না করে তাহলে তার সম্পত্তি অবৈধ বলে বিবেচনা করা। আপনি যদি নির্ধারিত ট্যাক্স প্রদান না করেন তাহলে আপনার সম্পত্তি সরকার বাজেয়াপ্ত করার অধিকার রাখে। তাই একটি দেশের ট্যাক্সের ব্যাপারটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
টিন সার্টিফিকেট কেন দরকার হয়
১. ব্যবসা শুরু করার জন্য ট্রেড লাইসেন্স নিতে।
২. গাড়ির মালিকানা পেতে।
৩. সিটি কর্পোরেশন এলাকায় জমি রেজিস্ট্রেশন বা ট্যাক্স দিতে।
৪. ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড পেতে।
৫. জাতীয় সঞ্চয়পত্র কিনতে।
৬. কোন কোম্পানির শেয়ার কিনতে।
৭. কোম্পানির নিবন্ধন করতে।
৮. কোন পণ্য আমদানির লাইসেন্স নিতে।
৯. আইনজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলীদের পেশার চর্চা করতে।
১০. নির্বাচনে প্রার্থী হতে।
১১. রাইট শেয়ারিং কোম্পানিতে চাকরি নিতে। (ইত্যাদি)
১২. গুগল এডসেন্স বা ফেসবুক এডস এর পেমেন্ট করার ক্ষেত্রে।
e-tin আবেদন করার পদ্ধতি
অনেকেই হয়তো জানেন না আপনি অনলাইনের মাধ্যমেই মাত্র পাঁচ মিনিটের মধ্যেই টিন সার্টিফিকেট তৈরি করে ফেলতে পারবেন। তবে প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে অনলাইনে আবেদন করার পরেও আপনাকে উপরোক্ত অফিসে গিয়ে অনুমতি নিয়ে আসতে হবে।
অনলাইনে টিন সার্টিফিকেট এর আবেদন
১. প্রথমে এই লিঙ্কে (https://secure.incometax.gov.bd/) চলে যান
২. তারপরে আপনি রেজিস্ট্রার অপশন এ ক্লিক করে নিচের ছবির মত করে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলো পূরণ করে নিন।
৩. ফরম পূরণের সময় আপনি যে মোবাইল নম্বরটি দিবেন সেই মোবাইল নম্বরে একটি ওটিপি কোড যাবে। সেই কোডটি বক্সে বসিয়ে রেজিস্ট্রার অপশনে ক্লিক করুন।
৪. তারপরে উপরে বাম দিকে tin application অপশনে ক্লিক করুন।
৫. তারপরে কর দাতার ধরন হিসেবে ইন্ডিভিজুয়াল বাংলাদেশি সিলেক্ট করুন। অন্যান্য ক্ষেত্রে অন্য অপশন গুলো সিলেক্ট করুন।
৬. তারপরে আপনার বয়স যদি ১৮ বছর বা তার উপরে হয় তাহলে উপরের অংশটি সিলেক্ট করুন, আর যদি ১৮ বছরের নিচে হয় তাহলে দ্বিতীয় নাম্বার অপশনটি সিলেক্ট করুন।
৭. তারপর আপনি যদি নিজের জন্য টিন সার্টিফিকেট তৈরি করতে চান, তাহলে ইন্ডিভিজুয়াল সিলেক্ট করুন। আর যদি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য টিন সার্টিফিকেট করতে চান, তাহলে বিজনেস এবং ফার্ম অপশনটি সিলেক্ট করুন। তারপর গো টু নেক্সট বাটনে ক্লিক করুন।
৮. ফরম পূরণের এই অংশে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য গুলো সঠিকভাবে পূরণ করুন।
৯. তারপর আপনার স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা সঠিকভাবে পূরণ করুন।
১০. তারপরে নেক্সট বাটনে ক্লিক করলে আপনার একটি বক্সে টিক চিহ্ন দিতে পারবে। সেখানে টিক চিহ্ন দিয়ে নেক্সট বাটনে ক্লিক করলেই আপনার সব তথ্য গুলো আবার পুনরায় দেখাবে। তারপর সাবমিট অ্যাপ্লিকেশন এ ক্লিক করলেই আপনার টিন সার্টিফিকেট এর পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করতে বলবে।
<imaze9
এই পিডিএফ ফাইলকে আপনি প্রিন্ট করে যেকোন জায়গায় ব্যবহার করতে পারবেন।
টিন সার্টিফিকেট সংশোধন
১. প্রথমে আপনারা এই লিঙ্কে (https://secure.incometax.gov.bd/TINHome) চলে যান।
২. তারপরে আপনার ইউজারনেম এবং পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করুন।
৩. লগইন করার পরে ভিউ টিন সার্টিফিকেট অপশনে ক্লিক করুন।
৪. তারপরেই এডিট/কারেক্ট/আপডেট অপশনে ক্লিক করলেই আপনি পূর্বের মতো নতুন করে সব তথ্য গুলো আপডেট করতে পারবেন।
এখানে আপনি পূর্বের মতো সব তথ্য গুলো নতুন করে ব্যবহার করতে পারবেন। নতুন করে তথ্যগুলো আপডেট করার পরে আপনি আবার টিন সার্টিফিকেট পিডিএফ আকারে ডাউনলোড। এবং সেই পিডিএফ ফাইলটি আপনি প্রিন্ট করে যেকোন জায়গায় খুব সহজেই ব্যবহার করতে পারবেন।
টিন সার্টিফিকেট এর সুবিধা সমূহ
টিন সার্টিফিকেট ডাউনলোড, আবেদন, সংশোধন
১. আপনি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কোন টাকা জমা করলে আপনার যদি টিন সার্টিফিকেট থাকে তাহলে আপনার সেই জমা হতে ১০% ট্যাক্স দিতে হবে। আর যদি আপনার টিন সার্টিফিকেট না থাকে তাহলে আপনাকে ১৫% ট্যাক্স প্রদান করতে হবে।
২. টিন সার্টিফিকেট থাকলে আপনি ব্যাংকের লোন এবং ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড আনতে পারবেন।
৩. সরকার প্রতিবছর বিভিন্ন ধরনের আর্থিক প্রণোদনা দেয়, এইসব আর্থিক সাহায্য গুলো পেতে অবশ্যই টিন সার্টিফিকেট লাগবে।
টিন সার্টিফিকেট এর অসুবিধা
টিন সার্টিফিকেট এর অসুবিধা হলো আপনার যদি কর দেওয়ার যোগ্যতা থাকে তাহলে অবশ্যই আপনাকে সরকারি টেক্স প্রদান করতে হবে।
আপনি যদি আপনার কর যোগ্য ইনকামের ট্যাক্স প্রদান না করেন তাহলে আপনার ইনকাম অবৈধ হিসেবে ধরা হবে। তবে আপনার ইনকাম যদি পরপর তিন বছর করযোগ্য না হয় তাহলে চতুর্থবার থেকে আপনি কর না দিলেও চলবে।
আশা করি আজকের পোস্টটি আপনাদের অনেক কাজে আসবে। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।