আমরা মনে করি দালাল ছাড়া কোনভাবেই পাসপোর্ট সংশোধন করা সম্ভব নয়। আমাদের এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল, বর্তমানে অনলাইনের মাধ্যমেও আমরা পাসপোর্ট এর তথ্যগুলো সংশোধন করতে পারব। যারা অনলাইনে পাসপোর্ট সংশোধন সম্পর্কে না জানেন তারা এই লেখাটি সম্পূর্ণ পড়ে পাসপোর্ট সংশোধন করুন অনলাইনে ।
দালাল ছাড়া পাসপোর্ট সংশোধন
যদি আপনি দালাল ছাড়া আপনার পাসপোর্টটি সংশোধন করতে চান বা পাসপোর্ট এর কোন তথ্য পরিবর্তন করতে চান তাহলে এর একমাত্র মাধ্যম হলো অনলাইনে পাসপোর্ট সংশোধন। অনলাইনে আবেদন ছাড়া আপনারা অন্য কোন পদ্ধতিতে দালাল ব্যতীত পাসপোর্ট সংশোধন করতে পারবেন না।
এই লেখাটিতে আমরা দেখাবো কিভাবে আপনারা দালাল ছাড়া অনলাইনের মাধ্যমে আপনার পাসপোর্টটি সংশোধন করে নিতে পারবেন। পাসপোর্ট সংশোধন আবেদন ফরম এবং সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। এবং তার আগে চলুন জেনে নেয়া যাক পাসপোর্ট সংশোধন করতে আমাদের কি কি ধরনের কাগজপত্র প্রয়োজন হতে পারে।
পাসপোর্ট সংশোধন করতে কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন
পাসপোর্ট সংশোধনের ক্ষেত্রে আপনাদের নির্দিষ্ট কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হবে যা সংশোধন আবেদনের আগে আপনাদের ম্যানেজ করে রাখতে হবে।
- আবেদনে সারাংশের প্রিন্ট কপি
- সংশোধন এর আবেদন ফরম
- অনলাইনে আবেদনের প্রিন্ট কপি
- জন্ম নিবন্ধন সনদ/ জাতীয় পরিচয় পত্র (জন্ম নিবন্ধন সনদ অবশ্যই অনলাইন করা থাকতে হবে)
- পূর্ববর্তী পাসপোর্ট এর মেইন কপি ও ডাটা পেইজের প্রিন্ট কপি
- পেমেন্ট স্লিপ
- GO / NCO (সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে )
পাসপোর্ট এর তথ্য সংশোধনের ক্ষেত্রে যে সকল কাগজপত্র প্রয়োজন
- নিকাহনামা (বৈবাহিক অবস্থা)
- কর্মক্ষেত্রের প্রত্যয়ন পত্র (পেশা)
- পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, টেলিফোন বিল বা বিদ্যুৎ বিলের কপি (ঠিকানা)
- হলফনামা বা সার্টিফিকেট (নিজের নাম ও বয়স)
- পিতা মাতার ভোটার আইডি কার্ড অরজিনাল কপি ও ফটোকপি, সার্টিফিকেট, হলফনামা (পিতা/মাতার নাম)
- GD এর মূলকপি ও ফটোকপি (পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে)
- ৬ বছর বয়সের নিচে হলে 3R Size এর ল্যাব প্রিন্ট গ্রে ব্যাকগ্রাউন্ড ছবি।
- ১৫ বছর বয়সের নিচে হলে পিতা মাতা পাসপোর্ট সাইজের ছবি
- ১৮ বছর বয়সের নিচে হলেই নিজের অনলাইন জন্ম নিবন্ধন সনদ ও পিতা-মাতার ভোটার আইডি কার্ডের মেইন কপি এবং ফটোকপি।
- চেয়ারম্যানের প্রত্যয়ন পত্র
বিশেষ দ্রষ্টব্য ১: আপনার পাসপোর্টে যদি নিজের নাম অথবা জন্ম তারিখ এবং আপনার পিতা ও মাতার নাম, এই সকল তথ্যে কোন ভুল থেকে থাকে তাহলে একজন উকিলের কাজ থেকে এফিডেভিট বা হলফনামা তৈরি করে নিতে হবে। হলফনামা তৈরীর জন্য কোন উকিলের কাছে গেলে নির্দিষ্ট প্রমাণপত্র উপস্থাপন করে তাকে নির্দিষ্ট ফি প্রদান করলে সে আপনাকে হলফনামা তৈরি করে দিবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য ২: আপনার এবং আপনার পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন সনদ এবং ভোটার আইডি কার্ডে যদি কোন তথ্যে ভুল থেকে থাকে তা পাসপোর্ট সংশোধন করার আবেদন এর পূর্বে এই ভুলগুলো সংশোধন করে নিতে হবে।
পাসপোর্ট সংশোধন করার পদ্ধতি
পাসপোর্ট সংশোধন করার জন্য অবশ্যই আপনাকে ফরম পূরণ করতে হবে। ফরম পূরণ করে এরপরে আপনাকে পাসপোর্ট রি ইস্যু করার জন্য অনলাইনে এপ্লাই করতে হবে । অনলাইনে এপ্লাই করার পরে প্রিন্ট কপি সংগ্রহ করে সংশোধন ফি পরিশোধ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলো যুক্ত করে নিতে হবে। এবং এগুলো নিয়ে নির্ধারিত তারিখে পাসপোর্ট অফিসে যেতে হবে।
ফরম আপনারা অনলাইন থেকে ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। অনলাইন থেকে ডাউনলোড করার পরে কোন প্রিন্টিং এর দোকান থেকে এটিকে প্রিন্ট করে নিবেন। অথবা যে সকল দোকানে পাসপোর্ট জাতীয় কাজ করে তাদের কাছে সংশোধন ফরম পেয়ে যাবেন।
প্রিন্ট করে সংশোধন ফরমটি কালো কালির কলম দিয়ে পূরণ করবেন। এরপরে উপরের ছবিতে দেখানো মার্ক করা অপশন গুলো এখানে দেওয়া আছে ব্যাংকের নাম এবং ব্যাংকের শাখা ও রশিদ নং ও ফি’র পরিমাণ এগুলো ভালোভাবে দেখে পূরণ করতে হবে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: অনলাইনে আবেদন শেষে আবেদন ফি সংশোধন করার পরে ব্যাংক থেকে আপনাকে যে রশিদ দেওয়া হবে সেই রশিদ অনুযায়ী ফরমের এই তথ্যগুলো পূরণ/প্রদান করতে হবে।
উপরের ছবিটি লক্ষ করুন, এখানে এক সাইডে দেওয়া আছ “পাসপোর্টে বর্তমানে প্রদর্শিত তথ্য” এখানে আপনার বর্তমানে যে তথ্য দেওয়া আছে সেটি প্রদান করুন। এবং অন্য সাইটে দেওয়া আছে “পরিবর্তিত/সংশোধিত তথ্য” এখানে আপনি যেই তথ্যটি সংশোধন করতে চান তার সঠিকটি বসিয়ে দিন। যেমনঃ
আপনার পাসপোর্টে আপনার নাম দেওয়া আছে রবিউল হাওলাদার – কিন্তু আপনি সংশোধন করে আপনার নাম দিতে চান রবিউল শিকদার। সে ক্ষেত্রে “পাসপোর্টে বর্তমানে প্রদর্শিত তথ্য” এই সাইডে আপনার পূর্বের নাম (রবিউল হাওলাদার) বসবে এবং “পরিবর্তিত/সংশোধিত তথ্য” এই সাইডে আপনার সংশোধিত নাম (রবিউল শিকদার) বসবে।
এই ভাবে করে আপনি যে সকল তথ্যগুলো সংশোধন করতে চান তা আলাদা আলাদা ঘরে লিপিবদ্ধ করুন। তবে পাসপোর্ট সংশোধন ফরম পূরণ করার ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে সতর্কতার সাথে এটি পূরণ করতে হবে। বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে ফরম পূরণের ক্ষেত্রে যেন কোন কাটাকাটি না হয়।
অনলাইনে আবেদনের পদ্ধতি
আপনাকে ই-পাসপোর্ট এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে এবং সেখান থেকে আবারও নতুন করে ই-পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে হবে। এই কাজটি আপনারা চাইলে কোন কম্পিউটারের দোকান থেকে করিয়ে নিতে পারেন এবং আপনাদের সুবিধার্থে নিচে একটি ইউটিউব ভিডিও দিয়ে দেবো ওই ভিডিওটি দেখে আপনি নিজে করতে পারবেন।
ই–পাসপোর্ট এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইট লিংক
পাসপোর্ট সংশোধন করুন অনলাইনে এই লেখাটিতে আমরা আপনাদের বোঝানোর চেয়েছি কিভাবে দালাল ছাড়া আপনারা অনলাইনে পাসপোর্ট সংশোধনের জন্য আবেদন করবেন। আবেদন করার ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনারা পেমেন্ট মেথড অফলাইন দিবেন। এতে করে আপনাদের কাজটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। আপনারা ব্যাংকে গিয়ে নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে রশিদ সংগ্রহ করে নিতে পারবেন।
অনলাইনে আবেদন করার ইউটিউব ভিডিও দেখুন
উপরে দেওয়া ভিডিওটি দেখে আপনারা খুব সহজেই ই-পাসপোর্ট এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে আপনার পাসপোর্টটি সংশোধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। ভিডিওটি দেওয়ার কারণ হলো এই ভিডিওর মধ্যে সম্পূর্ণভাবে বিস্তারিত দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে আপনারা কিভাবে আবেদন করবেন এবং কি কি কাজ করা লাগবে সবকিছু।
সঠিকভাবে আবেদন কাজ সম্পন্ন করার পরে আপনারা দুটি ডকুমেন্ট দেখতে পাবেন Print Summary এবং Application Form for Printing এই ডকুমেন্ট দু’টোকে সরাসরি প্রিন্ট করে নিন। যদি আপনার কম্পিউটারে প্রিন্টার না থাকে তাহলে এগুলো পিডিএফ ফাইল হিসেবে ডাউনলোড করে পরবর্তীতে কোন প্রিন্টার এর দোকান থেকে প্রিন্ট করে নিবেন।
এর পরে ব্যাংকে গিয়ে পাসপোর্ট সংশোধন ফি পরিশোধ করে সেখান থেকে রশিদ সংগ্রহ করে। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলো নিয়ে নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসে চলে যান। সেখানে আপনার ফিঙ্গারপ্রিন্ট এবং বায়োমেট্রিক তথ্যগুলো সাবমিট করুন আপনার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস গুলোতে।
যে সকল ব্যাংকে পাসপোর্ট সংশোধন ফি জমা দিতে পারবেন
যে কোনো সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংকে আপনারা পাসপোর্ট সংশোধন ফি জমা দিতে পারবেন না। তাদের নির্ধারিত কিছু ব্যাংক রয়েছে সেই সকল ব্যাংকে আপনাদের সংশোধন ফি জমা দিতে হবে। চলুন জেনে নেয়া যাক কোন কোন ব্যাংকে ফি জমা দেয়া যাবে।
- Sonali Bank
- Dhaka Bank
- Bank Asia
- One Bank
- Premier Bank
- Trust Bank
- A-Challan
পাসপোর্ট সংশোধন ফি কত টাকা?
পাসপোর্ট এর যেকোন তথ্য সংশোধন করতে হলে আমাদেরকে সরকারিভাবে নির্দিষ্ট কিছু টাকা ফি প্রদান করতে হবে।
৪৮ পৃষ্ঠা এবং ৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট
জরুরী বিতরণ: ৬,৩২৫ টাকা।
নিয়মিত বিতরণ: ৪,০২৫ টাকা।
৪৮ পৃষ্ঠা এবং ১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট
জরুরী বিতরণ: ৮,০৫০ টাকা।
নিয়মিত বিতরণ: ৫,৭৫০ টাকা।
৬৪ পৃষ্ঠা এবং ৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট
জরুরী বিতরণ: ৮,৬২৫ টাকা।
নিয়মিত বিতরণ: ৬,৩২৫ টাকা।
৬৪ পৃষ্ঠা এবং ১০ বছর মেয়াদি পাসপোর্ট
জরুরী বিতরণ: ১০,৩৫০ টাকা।
নিয়মিত বিতরণ: ৮,০৫০ টাকা।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: যেকোনো সময় পাসপোর্ট সংশোধন ফি পরিবর্তন হতে পারে।
আশা করি, পাসপোর্ট সংশোধন করুন অনলাইনে এই পোষ্টের মাধ্যমে আপনাদেরকে বুঝাতে পেরেছি কিভাবে দালাল ছাড়া নিজেরাই অনলাইনের মাধ্যমে এটি করে নিতে পারবেন। পাসপোর্ট সংশোধনের জন্য আবেদন করার পড়ে সংশোধিত পাসপোর্ট হাতে পেতে আপনাদের কিছু দিন সময় লাগতে পারে, নির্দিষ্টভাবে কত সময় লাগবে তা বলা সম্ভব নয়।