কৃষি ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন এই পোস্টের মাধ্যমে|বাংলাদেশ হল একটি কৃষি প্রধান দেশ। এদেশে কোটি কোটি কৃষক রয়েছে। কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের খরচের জন্য অনেক সময় লোন নিতে হয়। কিন্তু বিভিন্ন ব্যাংক জামানত ছাড়া কৃষকদের কোন ধরনের লোন দিতে চায় না। যার ফলে ১৯৭৩ সালের ২৭ নভেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে কৃষি ব্যাংক চালু হয়।
কৃষি ব্যাংকের মূল লক্ষ্য হল কৃষকদের উন্নয়ন এবং গ্রামকে উন্নয়ন করা। এছাড়া গ্রামের মানুষদের দরিদ্রতা কমানোর জন্য এখন বর্তমানে প্রতিটি ইউনিয়ন এ কৃষি ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অন্যান্য ব্যাংকে তুলনায় কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে আপনারা বা কৃষকরা খুব সহজে লোন নিতে পারে।
কৃষি ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম
বর্তমানে বেশিরভাগ ব্যাংক অনলাইন এর মাধ্যমে একাউন্ট খোলার সিস্টেম চালু করেছে। কিন্তু কৃষি ব্যাংকে এখন পর্যন্ত অনলাইনের মাধ্যমে একাউন্ট করার কোন সিস্টেম চালু হয়নি। তবে অন্যান্য ব্যাংকের মতোই কৃষি ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম কানুন রয়েছে।
কৃষি ব্যাংকে একাউন্ট খোলার জন্য আপনার নিকটস্থ কৃষি ব্যাংকের ব্রাঞ্চে গেলে সেখানে আপনাকে একটি ফরম পূরণ করতে হবে। সে ফরমটিতে আপনার নাম, বাবার নাম, মাতার নাম, বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানার মত ব্যক্তিগত সকল তথ্য সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। ফর্মটিতে তথ্যগুলো আপনার ব্যক্তিগত ডকুমেন্ট (যেমন: জাতীয় পরিচয় পত্র ইত্যাদির) অনুসারে সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে।
কৃষি ব্যাংকে একাউন্ট করার জন্য আপনার কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হবে।
কৃষি ব্যাংক একাউন্ট করার জন্য যা যা দরকার
প্রতিটি ব্যাংকের মতো কৃষি ব্যাংকে একাউন্ট করার জন্য আপনার কিছু কাগজপত্র প্রয়োজন হবে।
- অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য ফরম। ফর্মটি সঠিকভাবে পূরণ করে জমা দিতে হবে।
- যে ব্যক্তির নামে একাউন্ট খুলবেন সেই ব্যক্তির জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি।
- যে ব্যক্তির নামে একাউন্ট খোলা হবে সেই ব্যক্তির শব্দ তোলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
- অ্যাকাউন্ট সচল রাখার জন্য একাউন্ট খোলার সময় ১০০০ টাকা প্রথমে ডিপোজিট করতে হবে বা জমা দিতে হবে।
- একটি সচল মোবাইল নাম্বার। মোবাইল নাম্বারটি অবশ্যই সচল হতে হবে, কারণ এই মোবাইল নম্বরে আপনার ব্যাংক একাউন্টের সকল লেনদেনের বিস্তারিত এসএমএস যাবে। এছাড়া ব্যাংক থেকে আপনার সাথে এই মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করা হবে।
উপরের সকল ডকুমেন্ট গুলো নিয়ে আপনার নিকটস্থ কৃষি ব্যাংকে গেলে তারা আপনাকে একটি ফর্ম দেবে। এই ফর্মটিতে আপনার সকল ব্যক্তিগত তথ্য পূরণ করে, উপরে ডকুমেন্টগুলো ফর্মটির সাথে সংযুক্ত করে কৃষি ব্যাংকে জমা দিলে আপনার অ্যাকাউন্ট খোলা হয়ে যাবে। আপনার অ্যাকাউন্ট খোলা হয়ে গেলে ব্যাংক থেকে আপনাকে একটি চেকবুক দিবে। অনেক সময় দিতে এক থেকে দুই দিন দেরি হতে পারে।
ওই চেকবুকে আপনার ব্যাংকের শাখার নাম ও একাউন্ট নাম্বার উল্লেখ করা থাকবে। এই চেক বুকটি অবশ্যই নিজের সাথে রাখবেন। চেকবুকে যে অ্যাকাউন্ট নাম্বারটি থাকবে সেটি আপনার নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম্বার। টাকা উঠানোর জন্য এই চেক বুকটি সাথে নিয়ে যাবেন।
কৃষি ব্যাংক সুযোগ সুবিধা
কৃষি ব্যাংকের সবচেয়ে বড় সুবিধা এবং লক্ষ্য হল কৃষকদের ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করা। আপনারা অন্যান্য ব্যাংক থেকে যে সকল সুবিধা পেতেন, সেই সকল সুবিধাই কৃষি ব্যাংক আপনাকে দিবে। কারণ এটি একটি সম্পূর্ণ সরকারি ব্যাংক। কৃষি ব্যাংক সম্পূর্ণ সরকারি হওয়ার কারণে কৃষি ব্যাংক স্বল্প সুদে গ্রাহকদের ঋণ দিয়ে থাকে। এছাড়া কৃষি ব্যাংকে আরো কিছু সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।
- কৃষি ব্যাংকে আপনারা ডিপিএস খুলতে পারবেন।
- কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নিলে সুদের হার অনেক কম।
- কৃষি ব্যাংকে সিসি লোন সুবিধা রয়েছে।
- কৃষকরা চাইলে কৃষি ব্যাংক থেকে সহজেই লোন নিতে পারে।
এছাড়া কৃষি ব্যাংকে আপনারা অন্যান্য ব্যাংকের মতোই আরো অনেক ধরনের সুযোগ সুবিধা পাবেন। যেগুলো ব্যাংকে গিয়ে তার কর্মকর্তাদের বললেই তারা আপনাকে আরও সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিবেন।
কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার উপায়
কৃষকদের কথা চিন্তা করে কৃষি ব্যাংকে সহজ লোন সুবিধা রয়েছে। শুধুমাত্র আপনার একটি জমির দলিল বা আপনার বাড়ির দলিল এবং একজন গ্যারাটেন্ট এর মাধ্যমে আপনারা কৃষি ব্যাংক থেকে সহজেই লোন নিতে পারবেন। তবে লুনের পরিমাণ আপনার জমির দলিল এবং গ্যারাটেন্ট অনুযায়ী কত হবে সেটা নির্ধারিত হবে।
কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নিতে হলে আপনার অবশ্যই কৃষি ব্যাংকে একাউন্ট থাকতে হবে। আপনার যদি কৃষি ব্যাংকে একাউন্ট না থাকে তাহলে আপনি লোন নিতে পারবেন না। তাই আগে অবশ্যই কৃষি ব্যাংকে একাউন্ট করে নিতে হবে।
কৃষি ব্যাংকে আগেই যদি একাউন্ট থাকে তাহলে একাউন্ট করতে হবে না। আপনি সরাসরি কৃষি ব্যাংকের ম্যানেজারের সাথে কথা বললে লোন নেওয়ার বিষয়ে তিনি সঠিক একটি ধারণা দিতে পারবেন। তবে অন্যান্য ব্যাংকে তুলনায় কৃষি ব্যাংকের লোন নেওয়া অনেকটাই সহজ। লোনের বিষয়ে অবশ্যই ম্যানেজারের সাথে কথা বলবেন, কারণ কৃষি ব্যাংকে লোনের সকল কাজ ম্যানেজারের দ্বারা সম্পন্ন হয়।
কৃষি ব্যাংক ডিপিএস সুবিধা
কৃষি ব্যাংকে আপনারা ডিপিএস সুবিধা ও পাবেন। ডিপিএস হচ্ছে কোন একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর কিছু টাকা ব্যাংকে জমা রাখা এবং সেই টাকা কয়েক বছর পর একসাথে ব্যাংক থেকে তুলে নেওয়া। আপনি যেই টাকা ডিপিএস এ জমা রাখবেন সেই টাকার উপরে কৃষি ব্যাংক আপনাকে ভালো পরিমাণে সুদ প্রদান করবে। আর ডিপিএস এর এই অতিরিক্ত সুদ আপনার জিপিএস এর লাভ হিসেবে বিবেচিত হবে।
কৃষি ব্যাংকের সুদের পরিমাণ কত হবে সেটা আপনার ডিপিএসের ধরন অনুযায়ী নির্ধারিত হবে। কৃষি ব্যাংকে তিন মাস, ছয় মাস ও এক বছর মেয়াদে ডিপিএস সুবিধা রয়েছে। কৃষি ব্যাংকের উক্ত ডিপিএস সুবিধা তে কৃষি ব্যাংক গ্রাহকদের ৫.৭৫%, ৫.৮৫% ও ৬% হারে সুদ দিয়ে থাকে।
কৃষি ব্যাংকে সুদের হার
কৃষি ব্যাংক সহজেই কৃষকদের লোন দিয়ে থাকে। তবে যেহেতু কৃষি ব্যাংক হল একটি ব্যাংক, তাই তাদের থেকে অন্য ব্যাংক কম পার্সেন্টেজ এ লোন দিতেই পারে। তাই অবশ্যই কৃষি ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার আগে অবশ্যই তাদের লোনের সুদের পরিমাণ কত সেটা আগে জেনে নিতে হবে।
বর্তমানে কৃষি ব্যাংক লোনের উপর সুদ নির্ধারণ করেছেন ৯%। মানে আপনি যদি কৃষি ব্যাংক থেকে এক লক্ষ টাকা লোন নেন সে ক্ষেত্রে বাড়তি নয় হাজার টাকা আপনাকে সুদ দিতে হবে। লোন নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনি অন্যান্য ব্যাংকের সাথেও কথা বলতে পারেন। তবে খুব শীঘ্রই কৃষি ব্যাংক তাদের সুদের পরিমাণ কমিয়ে দিবে।
কৃষি ব্যাংক কি অনলাইন
কৃষি ব্যাংক অনলাইন কিনা সেটা জানার আগে আমাদেরকে জানতে হবে অনলাইন ব্যাংকিং কি। অনলাইন ব্যাংকিং হল কোন একটি ব্যাংকের সকল কার্যক্রম অনলাইনে পরিচালিত হওয়া বা ইন্টারনেটে পরিচালিত হওয়া। কৃষি ব্যাংকের অফিস সার্ভার অনলাইনে পরিচালিত হলেও তাদের গ্রাহকের জন্য আলাদা কোন অনলাইন সার্ভার নেই। তবে ভবিষ্যতে হয়তো কৃষি ব্যাংক গ্রাহকদের জন্য ও অনলাইন ব্যাংকিং চালু করবে।
কৃষি ব্যাংক সম্পর্কে আরো বিস্তারিতভাবে জানতে আপনারা কৃষি ব্যাংকের ওয়েবসাইট ভিজিট করতে পারেন। অথবা আপনারা সরাসরি আপনার নিকটস্থ কৃষি ব্যাংকে গিয়ে ম্যানেজারের সাথে কথা বললে তারা আপনাকে আরো ভালোভাবে কৃষি ব্যাংক সম্পর্কে বুঝিয়ে দিবেন।
বন্ধুরা আশা করি কৃষি ব্যাংক একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে আপনারা আজকের পোষ্টের মাধ্যমে সম্পূর্ণ ধারণা পেয়েছেন। কৃষি ব্যাংক সম্পর্কে আপনাদের যদি আর কোন ধরনের কিছু জানার প্রয়োজন হয় সে ক্ষেত্রে আমাদেরকে কমেন্টে জানাতে পারেন। আমরা সেটার উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব, ইনশাল্লাহ।