Skip to content

রমজান মাসের গুরুত্ব, প্রস্তুতি, তাৎপর্য ও বিধি-নিষেধ গুলো কি কি

রমজান মাসের গুরুত্ব, প্রস্তুতি, তাৎপর্য ও বিধি-নিষেধ   আসসালামুআলাইকুম বন্ধুরা, আরবি বছরের নবম মাস হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। এই মাসে মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা রোজা রাখে। রোজা শব্দটি ফারসি। এর আরবি পরিভাষা হচ্ছে সওম, বহুবচনে বলা হয় সিয়াম। সওম অর্থ বিরত থাকা, পরিত্যাগ করা। ইসলামী পরিভাষা সওম হলো আল্লাহর সন্তুটি অর্জনের জন্য সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়তসহকারে পানাহার থেকে বিরত থাকা। রোজা হচ্ছে ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ।

রমজান মাসের গুরুত্ব, প্রস্তুতি, তাৎপর্য ও বিধি-নিষেধ গুলো কি কি

রোজা ফরজ হয় দ্বিতীয় হিজরির শাবান মাসে। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে সুরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, হে মুমিনগণ! তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি, যাতে তোমরা আল্লাহভীরু হতে পারো, পরহেজগার হতে পারো।
পবিত্র রমজান মাস হলো মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের জন্য সবচেয়ে পবিত্রতম মাস। এই মাসের গুরুত্ব অন্যান্য মাসের তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়া পবিত্র রমজান মাসে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর পবিত্র কুরআন মাজীদ সম্পূর্ন নাযিল হাওয়াই এর গুরুত্ব আরো বেশি বেড়ে যায়। এছাড়া অধিকাংশ আসমানী কিতাব রমজান মাসে নাযিল হয়।

রমজান মাসের গুরুত্ব, প্রস্তুতি, তাৎপর্য ও বিধি-নিষেধ

ইসলামে অন্যান্য মাসের তুলনায় রমজান মাসের গুরুত্ব অনেক বেশি। কারণ এই মাসে পবিত্র কুরআন নাযিল হয়েছিল, এবং মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা এই মাসে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখে।
গরীব ও অনাহারীদের খাদ্য কষ্ট অনুভব করার জন্য আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের এই বিধান দিয়েছেন। একজন মুসলমান যখন সারা দিন অনাহারে থাকে, তখন সে একজন অনাহারীর কষ্ট বুঝতে পারে এবং সেটা অনুভব করতে পারে।
একজন প্রকৃত ঈমানদার ব্যক্তি অবশ্যই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ও হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেখানো নিয়ম অনুযায়ী রোজা রাখবে। রোজার নিয়ম নিয়ে আমরা একটু পরেই আলোচনা করব।
আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে রোজা রাখার কথা বলেছেন, কিন্তু রোজার নিয়মকানুন পবিত্র হাদীস শরীফে বর্ণনা করা হয়েছে।রমজান মাসের গুরুত্ব, প্রস্তুতি, তাৎপর্য ও বিধি-নিষেধ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

রমজান সম্পর্কিত ৩ টি কোরআনের আয়াত নিচে উল্লেখ করা হলো

আয়াত নং ০১: হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্যে সিয়ামের বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার। (সূরা বাকারা-২:১৮৩)
আয়াত নং ০২: রমাজান মাস, এতে মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কোরআন অবর্তীর্ণ হয়েছে।সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে তারা যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে এবং কেউ অসুস্থ্য থাকলে কিংবা সফরে থাকলে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্যে যা সহজ তা চান এবং যা তোমাদের জন্যে কষ্টকর তা চান না, এজন্যে যে তোমাদের সংখ্যা পূর্ণ করবে এবং তোমাদের সৎপথে পরিচালিত করার কারণে তোমরা আল্লাহর মাহিমা ঘোষণা করবে এবং যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারে। (সূরা বাকারাহ ২:১৮৫)
আয়াত নং ০৩: সিয়াম নির্দিষ্ট কয়েক দিনের। তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে অথবা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পূর্ণ করবে। এটা যাদের সাতিশয় কষ্ট দেয় তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদইয়া-একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্যদান করা। যদি কেউ স্বা:স্ফূর্তভাবে সৎকাজ করে তবে তা তার পক্ষে অধিক কল্যাণকর। আর সিয়াম পালন করাই তোমাদের জন্যে অধিকতর কল্যাণকর যদি তোমরা জানতে। (সূরা বাকারা-২:১৮৪)

রোজা সম্পর্কিত কিছু হাদিস নিচে উল্লেখ করা হলো

হাদিস নং ০১: হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সো:)ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঈমান ও ইহতিসাবসহ রমজান মাসের সিয়াম পালন করবে, তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী গুণাহ মাফ করে দেওয়া হবে।(সহীহ বুখারী: ৩৮, সহীহ মুসলিম:৭৬০)
হাদিস নং ০২: হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সো:)ইরশাদ করেন, সিয়াম ঢালস্বরূপ। তোমাদের কেউ কোনোদিন সিয়াম পালন করলে তার মুখ থেকে যেন অশ্লীল কথা বের না হয়। কেউ যদি তাকে গালমন্দ করে অথবা ঝগড়ায় প্ররোচিত করতে চায় সে যেন বলে, আমি সায়িম। (সহীহ বুখারী: ১৮৯৪, সহীহ মুসলিম:১১৫১)
হাদিস নং ০৩: হযরত আবু হুরায়রা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ(সো:)ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, সিয়াম ব্যতীত আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই তার নিজের জন্য, কিন্তু সিয়াম আমার জন্য এবং আমিই এর প্রতিদান দেব। সিয়াম ঢালস্বরূপ। তোমাদের কেউ যেন সিয়াম পালনের দিন অশ্লীলতায় লিপ্ত না হয় এবং ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা তার সঙ্গে ঝগড়া করে, তাহলে সে যেন বলে, আমি সায়িম (রোজাদার)। যার হাতে মুহাম্মদের প্রাণ, তার শপথ! অবশ্যই সায়িমের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকের গন্ধের চেয়েও সুগন্ধি। সায়িমের জন্য রয়েছে দু’টি খুশি, যা তাকে খুশি করে। যখন যে ইফতার করে, সে খুশি হয় এবং যখন সে তার প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎ করবে, তখন সাওমের বিনিময়ে আনন্দিত হবে।রমজান মাসের গুরুত্ব, প্রস্তুতি, তাৎপর্য ও বিধি-নিষেধ

রোজাদারদের করণীয় ও বর্জনীয় কাজ

১. সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও জৈবিক চাহিদা পূরণ থেকে বিরত থাকা বা খাদ্য গ্রহণ না করা। এছাড়া রোজাদারদের অবশ্যই সব ধরনের অশ্লীল কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে।
২. একজন রোজাদার ব্যক্তির যদি গুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ না থাকে, সেক্ষেত্রে তাকে সব সময় আল্লাহর ইবাদত করতে হবে। একজন রোজাদার ব্যক্তিকে শুধুমাত্র খাদ্য নয়, নিজের জিব্বা কেউ সংযত রাখতে হবে। তিনি কি বলছেন এবং কি বলবেন, সেই বিষয়ে আগে থেকে চিন্তা ভাবনা করে কথা বলতে হবে।
৩. কারণ তার মুখের ভাষার কারণে ও তার রোজা হালকা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। সবচেয়ে ভালো হয় রোজা থাকা অবস্থায় যতটা সম্ভব কম কথা বলা। এছাড়া এমন কোন কথা বলা যাবে না যেটা গীবত হয়। কারণ ইসলামে গীবতকে মারাত্মক গুনাহ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
৪. একজন রোজাদারের ক্ষুধা ও পিপাসা হওয়া স্বাভাবিক, তবে এটা যেন আপনার চেহারায় ভালোভাবে ফুটে না ওঠে। এই বিষয় নিয়ে মানুষের সাথে আলোচনা না করাই উত্তম।
৫. রমজান মাস আসলে অনেকেই তাদের রোজগারের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। সেটা ভালো, তবে অবৈধভাবে কোন রোজগারই কাম্য নয়। আপনি যদি রোজা রেখে অবৈধভাবে ইনকাম করেন, তাহলে আপনার রোজা হয়তো হয়ে যাবে। কিন্তু আপনার নামে একটি গুনা ও লেখা হয়ে যাবে। তাই সীমিত ইনকাম এর মধ্যেই শান্তি খুঁজে বের করুন। অযথা অবৈধ ইনকামের ধাবিত হবেন না।
৬. পবিত্র রমজান মাসে প্রতিটি ইবাদতের জন্য ৭০ গুণ সাওয়াব এর ঘোষণা করা হয়েছে। তাই রমজান মাসজুড়ে যত পারবেন আল্লাহর ইবাদত করবেন।
৭. যেখানে থাকলে আল্লাহর ইবাদত বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে, সেই জায়গায় বেশি থাকার চেষ্টা করবেন (যেমন: মসজিদ ইত্যাদি)। আবার যেখানে থাকলে আপনার গুনাহার কাজ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে, ঐ সমস্ত জায়গায় এড়িয়ে চলুন (যেমন: দোকান ও বাজার ইত্যাদি)।
৮. একজন রোজাদারকে অবশ্যই সহানুভূতিশীল হতে হয়। অযথা মানুষের সাথে ঝগড়া বিবাদ করবেন না। এছাড়া যত পারবেন কম কথা বলার চেষ্টা করবেন, এতে করে আপনার ঝগড়া-বিবাদ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে।
৯. রোজা রাখার সময় যদি অজান্তে কোন কিছু খেয়ে ফেলেন, তাহলে পুনরায় আবার সেটা খাবেন না। অনেকেই মনে করেন এতে রোজা ভেঙে যায়, আপনি যদি ভুলে কোন কিছু খেয়ে ফেলেন তাহলে আপনার রোজা ভাঙবে না।
১০. রমজান মাসে বিভিন্ন ধরনের ইসলামিক বই গুলো পড়বেন, এতে করে ইসলাম সম্পর্কে আপনার অজানা বিষয়গুলো জানা হয়ে যাবে। এছাড়া আমাদের দেশে রমজানে অফিস গুলোতে যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়, সেই সময়টাতে আল্লাহর ইবাদত ও ইসলামিক কাজ কর্মে নিয়োজিত থাকুন।
১১. আমাদের দেশে রমজান মাস আসলে বিভিন্ন দোকানদাররা বা ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়, এটা কখনোই করা যাবে না। ইসলামে ব্যবসা করা হালাল করা হয়েছে, তবে অবৈধভাবে ব্যবসা করলে তার জন্য কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আপনাকে অবশ্যই আপনার পণ্য ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে হবে।
১২. রোজা রাখার সময় সকল ধরনের অপকর্ম থেকে বিরত থাকার অঙ্গীকার করতে হবে। সে সাথে সকল ধরনের অপকর্ম থেকে বিরত থাকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।
১৩. এশার সালাতের (ফরজ ও সুন্নতের) পর বিতরের আগে দুই রাকাত করে মোট ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা সুন্নত। সম্ভব হলে খতম তারাবি আদায় করবে।
১৪. মহান আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, “ওয়া আনতুম আকিফুনা ফিল মাসজিদ” অর্থ- তোমরা মসজিদে ইতিকাফ করো। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের আশায় শর্ত সাপেক্ষে নিয়তসহকারে পুরুষেরা মসজিদে ও নারীরা ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করা। রমজানের শেষ দশক (২০ রমজান থেকে সূর্যাস্তের পূর্ব থেকে শাওয়াল মাসের চঁাদ দেখা পর্যন্ত) ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া। বিনা প্রয়োজনে অর্থাৎ গোসল, খাবার, প্রস্রাব–পায়খানা ব্যতীত অন্য কোনো অজুহাতে ইতিকাফের স্থান ত্যাগ করতে পারবে না। ইতিকাফ অবস্থায় কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, নফল নামাজ ইত্যাদিতে মশগুল থাকবে।
১৫. হজরত সাহল বিন সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে। এর মধ্যে একটি দরজার নাম ‘রাইয়ান’। এ দরজা দিয়ে শুধুমাত্র রোজাদারগণ প্রবেশ করবেন। অন্যরাও এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে চাইবে। কিন্তু রোজাদার ব্যতীত অন্য কাউকে এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। (বুখারি ও মুসলিম)।
১৬. মুসলমানদের নিজেদের মনের থেকে রোজার নিয়ত করতে হবে। রোজার নিয়ত ছাড়া রোজা পালন করলে, রোজা হবে না। নিয়ত মনে মনে করলেও হবে। অযথা এসব বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি করবেন না।

রোজার প্রতিদান

রমজান মাসের গুরুত্ব, প্রস্তুতি, তাৎপর্য ও বিধি-নিষেধ

১. যে ব্যক্তি পবিত্র রমজান মাসে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখবে এবং আল্লাহর ইবাদত করবে, তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ আল্লাহ তায়ালা মাফ করে দেবেন। হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত।
২. রোজা বা সিয়াম ও পবিত্র কোরআন, হাশরের ময়দানে বান্দা-বান্দী দের জন্য সুপারিশ করবে এবং মহান আল্লাহতালা সেই সুপারিশ গ্রহণ করবেন। হজরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত।
৩. হজরত আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত- রাসূল (সাঃ) বলেন, জেন্নি যাকাত শব্দের পবিত্রতা রক্ষা করে ঠিক তেমনি রোজা শরীরের পবিত্রতা রক্ষা করে। যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখবে, তাকে আল্লাহ সম্পূর্ণ ভাবে মাফ করে দেবে। এবং তার শরীর এবং মন উভয় পবিত্র হয়ে যাবে।
৪. হজরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত রাসুলে পাক (স.) বলেন, মানুষের প্রত্যেক আমলের সওয়াব দশ গুণ হতে সাত শত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। এই মাসে কোন ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এবাদত করলে, তার সওয়াব সাতশ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি হতে পারে।
৫. কোন মুমিন ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যদি রমজান মাসে প্রতিটি রোজা রাখে তাহলে এর প্রতিদান কেয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তা’আলা তাঁর নিজের হাতে দিবেন।

রমজান মাসের যে বিষয়গুলো থেকে বিরত থাকবেন

১. সেহরি না খাওয়া: অনেকেই আছেন যারা সাহরি না খেয়ে রাতের খাবার খেয়ে রোজা রাখেন, এটা সুন্নত পরিপন্থী। তাই সেহেরী খেয়ে তারপর রোজা রাখার চেষ্টা করবেন। তবে যদি কোন কারনে ভোর রাতে ঘুম না ভাঙ্গে, সেক্ষেত্রে আপনি সেহরি না খেয়েও রোজা রাখতে পারবেন।
২. বিলম্বে ইফতার করা: অনেকেই বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকার কারণে অনেক সময় ইফতারে দেরি হয়ে যায়, এটা ঠিক না। কারণ রোজার পূর্ণতা পায় ইফতারের মাধ্যমে। তাই অবশ্যই সঠিক সময়ে ইফতার করা আবশ্যক।
৩. লাইলাতুল কদর তালাশ না করা: রমজান মাসে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে- ‘কদরের রাত হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। ’ –সূরা কদর: ৪
রাসূলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশদিন লাইলাতুল কদর তালাশ করার জন্য নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশ দিনের বেজোড় রাতগুলোতে কদরের রাত খোঁজ। ’ –সহিহ বোখারি: ২০২০। এই রাতগুলোতে মুমিন ব্যক্তিগণ আল্লাহকে খুশি রাখার জন্য তাঁর ইবাদত করবেন।
৪. মিথ্যা কথা ও পাপ কাজ: একজন রোজাদার ব্যক্তি কখনো মিথ্যা কথা বলতে পারবে না এবং কোন ধরনের পাপ কাজের সাথে জড়িত থাকতে পারবে না।
৫. সুন্নাত ত্যাগ করা: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সালাম এর সুন্নাত কখনো ত্যাগ করা যাবে না। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, হাদিসে এসেছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- ‘এমন অনেক রোজাদার আছে, যার রোজা থেকে প্রাপ্তি হচ্ছে শুধু ক্ষুধা ও তৃষ্ণা। তেমনি কিছু নামাজি আছে যাদের নামাজ কোনো নামাজই হচ্ছে না। শুধু যেন রাত জাগছে। ’ –মুসনাদে আহমাদ: ৮৮৪৩
৬. দান-সদকা না করা: অনেক ব্যক্তি আছেন যারা অনেক অর্থের অধিকারী, কিন্তু কোন ধরনের দান তারা করেননা। প্রতিটি বিত্তবানদের অবশ্যই গরীবদেরকে দান করতে হবে। এছাড়া গরীব, এতিম ও মিসকীনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে।
গরীব, এতিম ও মিসকীনদের আপনার হালাল ইনকাম থেকে দান করতে হবে। সেই গানের বিনিময়ে আল্লাহ তাআলা অনেক খুশি হবেন।
৭. অপচয় করা: অনেক ব্যক্তি আছে যারা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন জিনিস অপচয় করে (যেমন: পানি, বিদ্যুৎ ইত্যাদি)। এই ধরণের অপচয় থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।
কারণ অপচয়কারী কে আল্লাহ কখনই পছন্দ করেন না। অপচয়কারী শয়তানের ভাই।
৮. তাড়াহুড়ো করে কুরআন খতম করা: অনেকে কুরআন খতম করতে গিয়ে অনেক বেশি তাড়াহুড়ো করে ফেলে। যার ফলে কোরআনের মধ্যে অনেক আয়াতের ভুল উচ্চারণ হতে পারে, এতে করে শব্দের বিকৃতি হওয়ার কারণে তার গুনাহ হতে পারে।
এছাড়া পবিত্র কোরআন বুঝে বুঝে আস্তে আস্তে পড়তে হয়। পবিত্র কুরআন বুঝে বুঝে পড়লে আপনি কোরআন সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে পারবেন। আর তাড়াহুড়ো করে পড়লে, শুধু পড়েই যাবেন। কোরআনের কিছুই বুঝবেন না।
৯. ফরজ নামাজে অলসতা করা: অনেকেই আছেন ফরজ নামাজের সময় হওয়ার পরেও নামাজ পড়তে যান না। যখন নামাজের ওয়াক্ত শেষ পর্যায়ে যায়, তখন তিনি নামাজ পড়তে যান। এগুলো থেকেও বিরত থাকতে হবে। ফরজ নামাজের ওয়াক্ত হবার সাথে সাথেই নামাজ আদায় করতে হবে।
আপনার ব্যক্তিগত কাজ ইবাদত শেষ করেও করতে পারবেন।
১০. দুনিয়াবী ব্যস্ততায় মগ্ন থাকা: অনেক ব্যক্তি আছে যারা নিজেদের ব্যক্তিগত কাজে এতটাই ব্যস্ত থাকে যে, তিনি আল্লাহর ইবাদত করতে ও ভুলে যায়। এই ধরনের কাজ থেকে অবশ্যই বিরত থাকবেন।
১১. গীবত করা: কারো সম্পর্কে কোন ধরনের বদনাম তার পিছনে পিছনে বলাকে গীবত বলা হয়। গীবতকে নিজের মরা ভাইয়ের মাংস খাওয়ার সাথে তুলনা করা হয়েছে। তাই গীবত করা থেকে দূরে থাকাই উত্তম। পিছনে পিছনে কারো সম্পর্কে বদনাম করবেন না।
দুনিয়াবী কাজের পাশাপাশি আল্লাহর এবাদত অবশ্যই বাধ্যতামূলক। তাই আল্লাহর ইবাদত করতে ভুলবেন না।
তাই বলা যাচ্ছে ইসলামী ইতিহাসে পবিত্র রমজান মাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, করছে এবং করবে। পবিত্র রমজান মাসে প্রকৃতি ঈমানদাররা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আল্লাহর ইবাদত সবসময় মগ্ন থাকে।
অযথা দুনিয়াবী কাজ থেকে দূরে থাকে, তবে অবশ্যই দুনিয়াবী কাজও করতে হবে। কিন্তু আল্লাহর এবাদত ছাড়া যাবে না।

আবশ্যকীয় কিচু কথা

রমজান মাসের গুরুত্ব, প্রস্তুতি, তাৎপর্য ও বিধি-নিষেধ

পরিশেষে বলব, পবিত্র রমজান মাসে রোজা রাখার ক্ষেত্রে অবশ্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর দেখানো পথ অনুসরণ করুন। পবিত্র রমজান মাসে বেশি বেশি পবিত্র কুরআন মাজীদ পাঠ করুন, আর অবশ্যই পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ আদায় করুন।
হিংসা, বিদ্বেষ থেকে দূরে থাকুন। কারণ যে ব্যক্তি কোন ব্যক্তির প্রতি হিংসা করে, সেই ব্যক্তি জীবনে কোনদিনও উন্নতি করতে পারে না। তার পুরো জীবনটাই চলে যায় অন্যের প্রতি হিংসা করে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক পবিত্র রমজান মাসের ক্যালেন্ডার
রমজান মাসের গুরুত্ব, প্রস্তুতি, তাৎপর্য ও বিধি-নিষেধ গুলো কি কি

শেষকথা

আশা করি আজকের আর্টিকেলটি আপনাদের অনেক ভালো লেগেছে। পবিত্র রমজান মাসে প্রতিটি রোজা যেন আপনারা সঠিকভাবে পালন করতে পারেন, এই কামনায় আজকের পোস্টটি এখানেই শেষ করছি। আল্লাহ হাফেজ।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *